বিস্ফোরণের তদন্ত চলছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ছেড়েছেন বাসিন্দারা
১৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণের পর ওই ভবনের বাসিন্দাদের সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গঠিত তদন্ত কমিটির কাজও চলমান আছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরিফ হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালি, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন, ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আ ন ম সালেক।
জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।
আরও পড়ুন- বুক চাপড়ে কাঁদছে বাবা, চোখের পানি মুছছে ৩ বছরের ছেলে
তদন্ত কমিটির সদস্যরা যে বাসায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, এর বাসিন্দা মণি রাণী দেবী ও তার ছেলে অর্ণব দেবনাথের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বক্তব্যও নিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
কমিটির সদস্য পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ভিকটিমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হচ্ছে। যে বাসায় বিস্ফোরণ হয়েছে সেই বাসার রান্নার চুলা পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই ভবনের গ্যাসের লাইন পরীক্ষা করা হয়েছে।’
কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আ ন ম সালেক বলেন, ‘গ্যাসজনিত কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে গ্যাসের লাইনে কোনো লিকেজ পাইনি। সেফটি ট্যাংকের গ্যাস থেকে এটা ঘটতে পারে। আবার রান্নার চুলার নব খোলা দেখেছি। বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
যেভাবে বিষ্ফোরণটি ঘটে চট্টগ্রামে (ভিডিও)
এদিকে বিস্ফোরণস্থলে এখনও কৌতূহলী মানুষের ভিড় লেগে আছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন ঘটনাস্থল দেখতে। আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিকট শব্দে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা মন থেকে মুছতে পারছেন না এলাকার লোকজন।
বিস্ফোরণস্থল পাঁচতলা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। ওই ভবনের সব বাসিন্দারা বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। পুরো ভবনটি এখন যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে !
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিস্ফোরণে ভবনের নিচতলায় দেওয়াল বিধ্বস্ত হয়েছে। এর ফলে পুরো ভবনটিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। গতকাল (রোববার) উদ্ধারকাজের সময়ই আমরা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেছিলাম।’
এদিকে সোমবার সকালে বিস্ফোরক অধিদফতরের একটি দলও ঘটনাস্থলে যায়। বিস্ফোরক অধিদফতরের পরিদর্শক মো তোফাজ্জল বলেন, গ্যাস লিকেজের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, সিএমপির গঠিত তিন সদস্যের কমিটি রোববার থেকে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকালই আমরা ভবনের বাসিন্দাসহ প্রত্যক্ষদর্শী এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের তদন্ত চলমান আছে। কমিশনার স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন কার্যদিবসের মধ্যেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।’
তিন সদস্যের এই কমিটিতে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পুলিশ সুপার পদমর্যাদা) মঞ্জুর মোরশেদ এবং কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা রয়েছেন।
আরও পড়ুন- সকালে বিস্ফোরণ, সন্ধ্যার মধ্যে কেজিডিসিএল’র তদন্ত শেষ
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় কেজিডিসিএল’র তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে গ্যাসের লাইনে কোনো লিকেজ না পাওয়া এবং রাইজার অক্ষত থাকার কথা বলা হয়েছে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডে বড়ুয়া ভবন নামে একটি পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় বিস্ফোরণে দেওয়াল বিধ্বস্ত হয়। আশপাশের আরও কয়েকটি বাসা এবং দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে নারী ও কিশোরসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন।