শেখ হাসিনার অনুমতি পেলে কংগ্রেসেই মহানগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণা
১৯ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:৫৫
ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের মঞ্চেই সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার প্রস্তাব উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ প্রস্তাব তুলে ধরবেন দলটির শীর্ষ নেতারা। শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে যুবলীগের কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি মহানগরের দুই শাখার শীর্ষ দুই নেতার নামও ঘোষণা করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরলে তার কাছে যুবলীগের কংগ্রেসের দিনই মহানগর দুই শাখার কমিটি ঘোষণার প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। তিনি অনুমতি দিলে কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের পর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মহানগরের দুই গুরুত্বপূর্ণ শাখা সংগঠনের চার নেতার নাম ঘোষণা করা হবে।
আগামী ২৩ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের এই কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। সকাল ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে এই কংগ্রেসের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের ঢাকা মহানগরের দুই শাখার শীর্ষ চার নেতার নাম ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ স্পষ্ট কোনো বার্তা দিতে পারেননি। এমনকি সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির নেতারা তো বটেই, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছেন না। তাই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিগন্যালের অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে।
যুবলীগ নেতারা বলছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার সঙ্গে থাকবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক যুবলীগ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন সাধারণত কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের আগেই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারিনি। তবে আমরা এটুকু বুঝতে পারছি, এই দুই শাখা কমিটির সম্মেলন আগেই হওয়া দরকার ছিল। যে কারণে আমরা যারা আগে যুবলীগের দায়িত্বশীল পদে ছিলাম, আমরা পার্টির সাধারণ সম্পাদকের (ওবায়দুল কাদের) সঙ্গে বসে আলাপ করেছি। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দুই শাখার কংগ্রেস আগে করা না গেলেও কেন্দ্রীয় কংগ্রেসেই যেন এই দুই কমিটির ঘোষণা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা প্রস্তাবনা দিতে চাই নেত্রীকে (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা)।
নানক বলেন, এটি আমাদের একটি প্রস্তাব। নেত্রী অনুমতি দিলে এটা বাস্তবায়ন করা যাবে।
অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত যুবলীগের অনেক নেতা সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়েছেন। পরে কেউ কেউ আত্মগোপনে ছিলেন। তবে কংগ্রেস সামনে রেখে তাদের অনেকেই সক্রিয় হয়েছেন। তাতে করে কংগ্রেসের দিন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটতে পারে কি না— এমন চাপা প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মধ্যে। তবে সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবেই যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে— এ বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।
এদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না হলেও এই দুই কমিটির পদপ্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপ থেমে নেই। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় তো বটেই, দলের ‘প্রভাবশালী’ নেতাদের বাসাতেও নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন ‘দোয়া’ নিতে। অনেকে সাংগঠনিকভাবে নিজের প্রভাব বোঝাতে শোডাউনও দিচ্ছেন। এই তালিকায় বর্তমান কমিটির অনেকে যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আত্মগোপনে থাকা নেতারাও। শুধু তাই নয়, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দীর্ঘ দিন ধরে পলাতক কোনো কোনো নেতাও এখন প্রকাশ্য হয়েছেন নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার আশায়।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ৭ বছরে কোনো সম্মেলন হয়নি সংগঠনটির। পরে আগামী ২৩ নভেম্বর সংগঠনের সপ্তম কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়। গত ২০ অক্টোবর গণভবনে যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যুবলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৫৫ বছর। ওই বৈঠকেই যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও হারুনুর রশীদকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতির নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
কংগ্রেস মঞ্চে কমিটি ঘোষণা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ যুবলীগের কংগ্রেস