Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হলি আর্টিজানে হামলা: আদালত


২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:১৫

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দৃষ্টি আকর্ষণ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করেন আদালত। পাশাপাশি তথাকথিত জিহাদ কায়েম করতে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার উদ্দেশ্যও জঙ্গিদের ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) আলোচিত হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, দালিলিক প্রমাণ না পাওয়ায় একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- যা আছে হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ে

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক মজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য জনমনে আতঙ্ক তৈরি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তামিম চৌধুরীর পরিকল্পনায় নব্য জেএমবি সদস্যরা গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা চালায়। তারা নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো চাপাতি দিয়ে ১৭ জন বিদেশি ও ৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। অনেককে গুরুতর আহত ও জিম্মি করে।

আরও পড়ুন- আসামির মাথায় আইএসের টুপি! কিভাবে এলো?

হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে তামিম চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে আদালতের পর্যবেক্ষণে। আদালত বলেন, আসামি আসলাম হোসেন র‌্যাশ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, ‘আমি তখন তামিম ভাইয়ের কাছে গুলশান বা কোনো কূটনৈতিক এলাকায় আক্রমণের উদ্দেশ্য জানতে চাই। তামিম ভাই বলে যে আমাদের সংগঠন নব্য জেএমবি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই গুলশান কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করা প্রয়োজন।’ আদালত বলেন, এ থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় যে তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বেই হলি আর্টিজানে হামলা সংঘটিত হয়।

আরও পড়ুন- ‘বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছি, এরকম হত্যায় দেশে দ্রুত বিচার হয়’

আদালতের এ পর্যবেক্ষণ থেকে এটিও অনুধাবন করা যায়, নব্য জেএমবি’র সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তারা আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। এই হামলার মাধ্যমে আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল নব্য জেএমবির।

আলোচিত এই মামলার আসামি অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৬(২) (অ) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- শুধু ঘোষণা নয়, রায় কার্যকর দেখতে চান এসি রবিউলেন মা-স্ত্রী

এই মামলায় দালিলিক প্রমাণ না পাওয়ায় মামলার আরেক আসামি নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলে পড়ে জঙ্গিরা। হামলায় রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন নাগরিকসহ রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের মধ্যে দু’জন প্রাণ হারান। একই ঘটনায় জঙ্গিদের গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে মারা যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান।

ঘটনাস্থলে তাণ্ডব চালানোর পর রাতভর রেস্তোরাঁয় আসা বাকি অতিথি ও রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি কমান্ডো টিম পরিচালিত অপারেশন থান্ডার বোল্ট এর মাধ্যমে অভিযানের সমাপ্তি ঘটে।

আরও পড়ুন-

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা নিম্ন আদালত

৮ আসামিকে আদালতে নেওয়া হয়েছে

রায় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

‘পুলিশের সক্ষমতা বাড়ায় কোণঠাসা জঙ্গিরা’

৫২ কার্যদিবস শেষে হলি আর্টিজান মামলার রায়

যেভাবে রায়ের পর্যায়ে পৌঁছালো হলি আর্টিজান মামলা

হলি আর্টিজানে হামলা: ৮ আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু

হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলা: কেমন ছিল রায়ের ১৫ মিনিট

আইএস আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ আদালতের পর্যবেক্ষণ টপ নিউজ নব্য জেএমবি সন্ত্রাসবিরোধী আইন হলি আর্টিজান হামলা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর