‘আমি না বাঁচলে আপার বিয়ে দিব ক্যামনে’
১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:০৫
ঢাকা: নিজের উপার্জনের অর্থে বড় বোনের বিয়ের পুরো ব্যয় বহন করতে চেয়েছিল আসাদ। ১৪ বছর বয়সী এই কিশোর প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করত। আগুনে তার শরীরের ৫০ ভাগ পুড়ে গেছে। বেডে শুয়েই সে বলছিল, ‘আমি না বাঁচলে আপার বিয়ে দিব ক্যামনে?’
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিউর বেডে শুয়ে এভাবেই কথা বলছিল খালা মুন্নি বেগম ও ভাই সোহেলের সঙ্গে।
মুন্নি বেগম সারাবাংলাকে জানান, আসাদের বাবার নাম আবুল কালাম, মা শাহানা বেগম। তাদের বাড়ি বরিশালের কাওয়ার চরে। কেরাণীগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকত তারা। তাদের চার সন্তান। প্রথম জন শিরিন, দ্বিতীয় জন সোহেল, তৃতীয় জন আসাদ ও চতুর্থ সন্তানের নাম আরিফা।
মুন্নি বেগম বলেন, ‘আসাদের বাবা আবুল কালাম এক সময়ে মাটি কাটার কাজ করতেন। বয়সের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় এখন আর তিনি কাজ করতে পারেন না। ওর মা আগে ইট ভাঙার কাজ করলেও অসুস্থতার কারণে এখন আর করতে পারেন না। আসাদের বড় ভাই সোহেল কাজ করতেন একটি বেকারিতে। তবে মাসখানেক হলো সেও বেকার। এমন অবস্থায় সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন আসাদ।’
আসাদের খালা বলেন, ‘দুই বছর ধরে আসাদ ইলেক্ট্রিকের কাজ করত। কাজ ভালো করত বলে সবাই তাকে পছন্দও করত। এর আগেও একবার ওই ফ্যাক্টরিতে যখন আগুন লাগে। তখন আসাদকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়। পরে সেখানকার সুপারভাইজার তাকে জোর করে নিয়ে চাকরিতে যোগ দেওয়ায়। ১৩ হাজার টাকা বেতনও ধরেছিল। বয়স অল্প হলেও কাজে দক্ষ ছিল সে। প্রায়ই বলত, বড় আপার বিয়ের খরচ পুরোটাই সে দিবে। সংসারের খরচও সেই চালাত। সে জন্যই হাসপাতালের বেডে শুয়ে বোনের বিয়ের কথা বলছিল।’
মুন্নি বেগম আরও বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আসাদের মোবাইলে ফোন করা হয়। ফোনে রিংও হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, ফোনে যেহেতু রিং হয়েছে সেহেতু সে ভালো আছে। তার একটু পরে যখন ফ্যাক্টরি থেকে একের পর এক পোড়া মানুষ বের করছে তখন আমরা ওকে খুঁজে পাই না। পরে আমরা ফ্যাক্টরিতে যাই। সেখানে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় না। তখনও আমাদের বলে নাই তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। রাত আটটার দিকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এখানে (বার্ন ইনস্টিটিউট) আছে আসাদ। এখানে এসে খুঁজতে খুঁজতে তাকে পাই। আসাদের দুই হাত বেশি পুড়ে গেছে।’
আসাদের ভাই সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওকে কাজে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে সে নিজে থেকেই কাজ করতে চেয়েছিল। ইলেকট্রিকের কাজ সে ভালো করত।’
উল্লেখ্য, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কেরাণীগঞ্জের চুনকুঠিয়ায় প্রাইম প্যাক্ট নামের একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রায় সোয়া একঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। আর ঘটনাস্থলেই মারা যান আরও একজন। এছাড়া ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন।