Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাবিতে হামলার শুরু করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’, শেষ করে ‘ছাত্রলীগ’


২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:২৬

ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার সমর্থকদের ওপর যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ হামলায় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের পরিষদের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, তারা হামলায় জড়িত নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিপি নুরকে প্রতিহত করেছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ বলছে, হামলার ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের ‘নিবৃত্ত করতে’ তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ভিপি নুরসহ অনুসারীদের ওপর হামলা-সংঘর্ষ, আহত ১৫

রোববার (২২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডাকসু ভবনে হামলার এ ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলার শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনাস্থলে সহকারী প্রক্টররা উপস্থিত থেকেও হামলা থামাতে পারেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দুপুর ১২টার দিকে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠানোর প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন করে। মানববন্ধন শেষে তারা ডাকসু ভবনে যান। সেখানে ভিপি নুরুল হক নুর তার সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদিনের মতো অফিসে ছিলেন। একপর্যায়ে সেখানে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

পরে ডাকসুর এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসু ভবনে প্রবেশ করেন। তারা নুরের সমর্থকদের বহিরাগত উল্লেখ করে বের করে দেন। এ সময় নিচে থাকা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা লাঠি, রড, কাঠের টুকরো নিয়ে হামলা শুরু করে। হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের পা ভেঙে যায়। এ ছাড়া তাদের অনেক সমর্থক মাথায় আঘাত পান।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, থেমে থেমে ঘণ্টাব্যাপী হামলা চলতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। পরে নুরসহ কয়েকজনকে স্ট্রেচারে করে বাইরে এনে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে পাঠান তিনি।

ঘটনার বিষয়ে নুরের প্যানেল থেকে ডাকসু’র সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রশ্রয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, হাসান আল মামুন, রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, মশিউর রহমানসহ অন্তত ৪০ জনের ওপর হামলা হয়েছে। কারও পা ভেঙে গেছে, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, বমি করছে, বুকের হাড় ভেঙে গেছে। অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে আমরা আশঙ্কা করছি।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এ জি এস সাদ্দাম হোসেন সারাবাংলাকে ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা চাই না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটুক। গত কয়েকদিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও নুরের সঙ্গে শিবির সংশ্লিষ্টদের ধারাবাহিক সংঘর্ষের ঘটনা দেখছি। আজও ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন ও ডাকসু ভবনে দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান করছিল। আমরা নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা দুই পক্ষকেই আহ্বান জানাই, তারা যেন নিজেদের ভেতরের সমস্যা সমাধান করে নেয়।’

হামলায় ছাত্রলীগের হল প্রার্থীদের অনেককেই দেখা গেছে উল্লেখ করলে সাদ্দাম বলেন, ‘আমরা থামানোর জন্য গিয়েছিলাম।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি লিখেছেন, ‘বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের নিয়ে ক্যাম্পাসে হামলা ও অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল পাগলা নূরা। সচেতন শিক্ষার্থী ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ স্বাধীনতাবিরোধীদের সমুচিত জবাব দিয়েছে। এ ক্যাম্পাসে কোনো স্বাধীনতাবিরোধীদের জায়গা হবে না। নুরুর নাটক সবাই বুঝে গেছে! ’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকের ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুরুকে প্রতিহত করেছে।’

ঘটনাস্থলে আপনি নিজে ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘আমি ছিলাম?’ যদিও ঘটনাস্থলে তাকে হেলমেট মাথায় লাঠি হাতে দেখা গেছে। তার হামলায় অংশ নেওয়ার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিপি নুরসহ আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠিয়েছি। সেখানে সহকারী প্রক্টররা আছেন। আগে আহতদের চিকিৎসা হোক, পরে সবার কথা শুনব।’

এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত ২৪ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছয় জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। তারা হলেন— ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, আমিনুল হক, সোহেল, নাজমুল, ফারাবী ও নাজমুল হক। তবে এদের মধ্যে ফারাবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে হাসপাতালের জেনারেল আইসিইউ’তে নেওয়া হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত হাসপাতালে ২৪ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে নুরসহ ছয় জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবারই হাতে-পায়ে ও মাথায় আঘাত আছে। এক্সরে ও সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। তাদের অবস্থা তেমন গুরুতর নয়। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব, চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন-

ফের আহত ভিপি নুর

ছাত্রলীগ ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢা‌বি ভিপি নুর হামলা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর