Wednesday 11 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিপি নুরের ওপর হামলা: ঢাবি ভিসির ‘পক্ষপাতে’ উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা


২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৪৭ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৫৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার অনুসারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিয়েছে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ। এসময় তারা উপাচার্যকে বলেন, দিনের পর দিন উপাচার্যের পক্ষপাতমূলক ও অমানবিক আচরণে তারা হতবাক, বিমর্ষ ও উদ্বিগ্ন। তার এই আচরণ অপরাধীদের আরও অপরাধ করতে অনুপ্রাণিত করছে।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই উদ্বেগের কথা জানান এবং স্মারকলিপি জমা দেন।

আরও পড়ুন- ঢাবিতে হামলার শুরু করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’, শেষ করে ‘ছাত্রলীগ’

লিখিত স্মারকলিপি পাঠ করেন শিক্ষা আন্দোলনকর্মী রাখল রাহা। উপাচার্য বরাবর লিখিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক্ত সর্বোচ্চ ও সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা। তার দায়-দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার জন্যই রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে করের টাকায় তার বেতন-ভাতা ও সম্মানি পরিশোধ করা হয়। আমাদের সন্তানদের আপনার অভিভাবকত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছি। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও কেন সরকারি কর্মকর্তার মতো আচরণ করছেন, তা অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের বোধগম্য নয়।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নজির ভঙ্গ করে ডাকসু ভবনে ঢুকে ৩০ জন ছাত্রকে নৃশংস কায়দায় মারধর করা হয়েছে। আক্রান্ত ছাত্ররা প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন সাহায্য না করে উল্টো আহত ছাত্রদেরই বহিষ্কারের হুমকি দেয়। অতীতেও এ ধরনের অভিযোগ ওঠার পর তার সুষ্ঠু বিচারের কোনো নজির নেই।

স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখি না। অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের বক্তব্যকে পরামর্শ হিসেবে নিচ্ছি।’ ডাকসু ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে উপাচার্য সেগুলো প্রতিহত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ওই ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি অভিভাবক ও নাগরিক সমাজকে আশ্বস্ত করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, লেখক ও শিক্ষা আন্দোলনকর্মী রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুসাদ ফরিদী, অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনে ডাকসু ভিপি নুরসহ তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এতে ভিপি নুরসহ তার অনুসারী বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় আহত ২৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয় জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোববার রাতে তুহিন ফারাবিকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভিপি নুরসহ বাকি পাঁচ জনের শারীরিক অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত

এদিকে, ভিপি নুরসহ অন্যদের ওপর হামলার বিচার চেয়ে রোববার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট। পরে সোমবার সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ হামলার ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকেও ওঠে নিন্দার ঝড়। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নিন্দা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনও। হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান কাদের। এ ঘটনার তদন্তের দাবিও জানান কামাল। পরে সোমবার কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাবি প্রশাসন।

পরে সোমবার হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আরেক নেতা মেহেদী হাসান শান্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হামলার ঘটনায় এদিন পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আট জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০ থেকে ৩৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পরে এই মামলায় মামুন ও তূর্যকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এই দু’জন ও মেহেদীকে পরে আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। পরে এ ঘটনায় মামলা করেছেন ভিপি নুরও। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাসকে এক নম্বর ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে দুই নম্বর আসামি করে ৩৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন তিনি।

ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ছাত্রলীগ ভিপি নুর ভিপি নুরের ওপর হামলা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর