ঢাবিতে হামলা ও ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মামলায় ডাকসু সদস্যের নিন্দা
২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার নিন্দা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ডাকসু সদস্য মো. তানভীর হাসান সৈকত নিজ নামে সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে সৈকত বলেন, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর অমানবিক ও জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। ডাকসু’র মতো ঐতিহাসিক স্থানে ছাত্রদের ওপর হামলা ডাকসুর একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। ডাকসু যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও মুক্তির হাতিয়ার, সেখানে এ ন্যাক্কারজনক হামলা ছাত্রদের অধিকার খর্ব করেছে। আমরা কোনোভাবেই এরকম অমানবিক ও নিষ্ঠুর হামলার সমর্থন করি না। আমরা চাই, সুষ্ঠ তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির ওপর হামলার সমগ্র ছাত্র সমাজের জন্য দুঃখজনক।
হামলায় ছাত্রলীগের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সৈকত বলেন, ২২ ডিসেম্বরের ঘটনাটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও নুরুল হক নুরের সমর্থকদের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহ। সেখানে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিনেট সদস্য সনজিত চন্দ্র দাস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইন ঘটনার শেষে সেখানে উপস্থিত হয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন। ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেনই না।
ভিপি নুরের দায়ের করা মামলার প্রসঙ্গে এই ডাকসু সদস্য বলেন, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে, নুরুল হক নুরের পক্ষ থেকে থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সেখানে ডাকসুসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর নাম দেওয়া হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের সব স্বাধিকার ও মুক্তির আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। অত্যন্ত সুকৌশলে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য সংগঠনটির নাম জড়ানো হচ্ছে।
মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সৈকত বলেন, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ডাকসু ও ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে, এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসঙ্গে অনতিবিলম্বে মামলা থেকে এদের নাম প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানাই। এমন মিথ্যা ভিত্তিহীন ও হাস্যকর মামলা ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না।
লিখিত বক্তব্যের শেষে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমরা চাই নুরুল হক নুরসহ ছাত্রদের ওপর হামলার সঠিক তদন্তসহ দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা একইসঙ্গে এটিও বলতে চাই, যেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো সংগঠনকে জড়িয়ে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা কেউ না লুটতে পারে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনে ডাকসু ভিপি নুরসহ তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এতে ভিপি নুরসহ তার অনুসারী বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় আহত ২৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয় জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন— মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আল মামুন, এ এস এম সনেট, ইয়াসির আরাফাত তুর্য, ইমরান সরকার, ইয়াদ আল রিয়াদ, মাহবুব হাসান নিলয়, তৌহিদুল ইসলাম মাহিম। মামলায় আরও অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) আল মামুন ও ইয়াসির আরাফাত তুর্যকে আটক করে পুলিশ। আজ পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়েরের পর ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার আরেক আসামি মেহেদী হাসান শান্তকে গ্রেফতার করা হয় মঙ্গলবার দুপুরে। তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বুধবার মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।
একই ঘটনায় শাহবাগ থানায় ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ভিপি নুর। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে এক নম্বর ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে মামলায়।
ডাকসু ভিপি ডাকসু সদস্য ডাকসু সদস্য সৈকত তানভীর হাসান সৈকত ভিপি নুর