‘চারদফা ধর্ষণের শিকার মেয়েটি, টিপে ধরা হয়েছিল গলা’
৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:৪৪
ঢাকা: ‘একটা বাচ্চা মেয়ে, তার ছোট্ট শরীরে অনেকগুলো মারাত্মক জখমের চিহ্ন। গলা টিপে ধরা হয়েছিল। সেখানেও কালশিটে দাগ । আমাদের মেয়েটা এখন মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত–ওর পাশে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারিনি। ও অনেক কিছু বলতে চাচ্ছিল।’
সোমবার (৬ জানুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কথাগুলো বলছিলেন মেয়েটির বিভাগের শিক্ষিকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের হাউজ টিউটর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষিকা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মেয়েটাকে চার দফায় ধর্ষণ করা হয়েছে। কী বলব, কী করব বুঝতে পারছি না। অসহায় লাগছে। ওর বাবা-মা আছেন এখন ভেতরে। তাদেরই বা কী বলে সান্ত্বনা দেবো?’
এই শিক্ষিকা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই ওসিসি’র তালবদ্ধ কলাপসেবল গেটের ওপারে কাঁচের দরজা একটু ফাঁকা হলো। সেখানে এসে দাঁড়ালেন একজন মধ্যবয়সী নারী। দরজার এ পাশে আইনজীবী পরিচয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের সঙ্গে দেখা করলেন। ৩০ সেকেন্ডের মতো কথা হলো। নিরাপত্তাকর্মী এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
পরে সেই আইনজীবীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়েটি আমার ভাগ্নি। আর যার সঙ্গে কথা বললাম, তিনি আমার বোন। আমার বোন ও দুলাভাই ঢাকার বাইরে থাকেন। কাল রাতেই মেয়ের খবর শুনে এসেছেন।’
ভাগ্নি কেমন আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও তো ভেতরে, আমাদের যাওয়া নিষেধ, একটু আগে শুনলাম ঘুমাচ্ছে। লাইফ থ্রেট নেই। কিন্তু ট্রমাটাইজড। আমার বোন আর দুলাভাই কিভাবে এত শক্ত আছেন, জানি না। আমরা সবাই শক্ত থাকার চেষ্টা করছি। প্লিজ খবরে আমাদের নাম-ঠিকানা দেবেন না।’
গতকাল রাত থেকে মেয়েটির সঙ্গে ওসিসিতে থাকা এক সহপাঠীর বড় বোন বলেন, ‘ওর শরীরে অনেক আঘাত, প্রচণ্ড ব্যথাও আছে। গলাসহ সারাশরীরে আঘাতের চিহ্ন। ওকে অনেক মারপিট করা হয়েছে। মানসিকভাবে শক্ত রাখার চেষ্টা করছি।’
ওসিসির থেকে বেরিয়ে আসা একজন সিনিয়র নার্সও জানালেন, ‘মেয়েটার শরীরে অনেক জখমের চিহ্ন। সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ভেতরে ডাক্তার-কাউন্সিলর সবাই আছেন। তাকে কোনো ধরনের প্রশ্ন করছি না আমরা। নিজে থেকে কিছু বললে শুনছি।’
সোমবার সকাল থেকেই ওসিসির সামনের গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন ভিড় সামলাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশের বিভিন্ন টিম, আইনজীবীরা আসছেন একের পর এক দল বেঁধে। বাইরে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করছেন দফায় দফায়। কখনো দল বেধে আসছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ভিড় সামলাতে দুুপুরে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সামনের দরজায় নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসি) কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন-
ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে’
কুর্মিটোলায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যান চলাচল বন্ধ
ঢাবির ওই শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড
ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় আলামত সংগ্রহে র্যাব ও ডিবি
ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় ঢাবি প্রশাসনের অভিযোগ
ধর্ষণের প্রতিবাদে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ
ঝোপের মধ্যেই ধর্ষণ, ছড়ানো ছিলো শিক্ষার্থীর বই-ঘড়ি-ইনহেলার