Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘৭ বাংলাদেশির শরীরে করোনাভাইরাস নেই’


৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:৩১

ঢাকা: চীন থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসা নাগরিকদের মধ্যে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়।

কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাতজন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হওয়া একজন বাংলাদেশির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমকে এ সব তথ্য জানান পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এ সময় আশকোনা ক্যাম্পে থাকা সকল বাংলাদেশির শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘চীন থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের ৩১২ জনেরই বিমানে থাকা অবস্থায় স্ক্রিনিং করা হয়। এদের মধ্যে আটজনের শরীরের তাপমাত্রা আমাদের প্রমাণ তাপমাত্রার থেকে বেশি হওয়ায় সাতজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও একজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সিএমএইচে থাকা বাংলাদেশি একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী। তার স্বামী ও সন্তানকেও তার সঙ্গে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়। সেদিনই আমরা এই আটজনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করি। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে আমরা পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাই। ফলাফলে আমরা জানতে পারি তারা কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন।

তিনি বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাত বাংলাদেশির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি না পাওয়ায় তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য আশকোনা হজক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। যিনি সিএমএইচে ছিলেন তিনি যেহেতু গর্ভবতী নারী এবং তার ছোট সন্তান রয়েছে তাকে সেখানেই (সিএমএইচ) রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও দুইটি পরিবার ছিল যাদের বাচ্চা বয়সে ছোট। যেহেতু বাচ্চারা বেশি ভালনারেবল ( সহজে ক্ষতি হতে পারে) সে জন্য আমরা ওই দুই পরিবারকে বাচ্চাসহ সিএমএইচে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হজ্ব ক্যাম্পের পরিবেশ নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে ডা. সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা হজ্ব ক্যাম্পের জায়গাটি তাদের জন্য তৈরি করেছিলাম। ফেসবুকে অনেকেই অনেক কিছু লিখছে। তবে এটা ঠিক যে, এখানে যারা আছেন তারা কিন্তু নিজের বাড়িতে এমনভাবে থাকেন না। ফ্লোরিং করেও অভ্যস্ত না। কিন্তু বুঝতে হবে যে, একটা বিশেষ জরুরি পরিস্থিতির কারণে এমনটি করা হয়েছে। তার মধ্যেও তারা যেন ভালো থাকেন সে জন্য ওয়াইফাই সংযোগ ও টেলিভিশন দেওয়া হয়েছে।

ক্যাম্পে সবাইকে একসঙ্গে রাখার কারণে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে কি না এই প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের এ পরিচালক বলেন, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না তাদের আসলে এক মিটার দুরত্বে ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আর তাই কোয়ারান্টাইনে সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবার বিছানাগুলোও সেভাবে রাখা হয়েছে। সবাইকে মাস্কসহ প্রয়োজনীয় সকল কিছুই দেওয়া হচ্ছে। যদি তারা নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তবে তা ১৪ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে। আর তাই এই সময় এখানে তাদের রেখে নিয়মিত স্ক্রিনিং করা হবে। তবে এই স্ক্রিনিংয়ের সময় ১৪ দিনই হবে কিনা তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত উহান থেকে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে। কিন্তু তাদের কারও মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা।

এ দিকে আইইডিসিআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর জানিয়েছেন, ২১ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৯৫২ জনের স্ক্রিনিং করা হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২৩ জনের স্ক্রিনিং সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কারো করোনাভাইরাস পাওয়া যায় নি।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন সহ ২১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি বলেও জানান তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আইইডিসিআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর জানান, চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে দুই জন জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দুই জনই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। টেস্ট-এ কারও শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন- চীনা নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত

এর আগে, গত ৩১ জানুয়ারি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট পাঠানো হয়। ১ ফেব্রুয়ারি দুপুর নাগাদ ফ্লাইটটি বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। ওই ফ্লাইটে উহান থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশি এসে পৌঁছান। এই ৩১২ জনের মধ্যে ১০ জন নারী ও ১২টি শিশু।

ফ্লাইটটি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আট জনের শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে সাত জনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং একজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়। ডা. ফ্লোরা জানালেন, কুর্মিটোলার ওই সাত জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন-

চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে ২ স্তরের ব্যবস্থা
উহান ফেরত ৮ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ
চীন ফেরত ৭ বাংলাদেশি কুর্মিটোলায়, একজন সিএমএইচে
চীন থেকে আসা বাংলাদেশিদের জন্য প্রস্তুত আশকোনা হজ্জ ক্যাম্প
হজ ক্যাম্পের আইসোলেশন ইউনিটে থাকবেন চীন ফেরত বাংলাদেশিরা

করোনাভাইরাস কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল চীন ফেরত বাংলাদেশি টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর