পাপিয়া দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে অনুমতির অপেক্ষায় র্যাব
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:১৬
ঢাকা: যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অনুমতি পেলে পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে র্যাব। এমনকি তাদের সঙ্গে সহযোগী সাব্বির ও শেখ তায়্যিবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এখন তারা ১৫ দিনের রিমান্ডে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে রয়েছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে র্যাব-১ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) শাফী উল্লাহ বুলবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাপিয়া-সুমন দম্পত্তিসহ চারজন ১৫ দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)। আবেদনটি অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমতি পেলে তাদের র্যাব-১ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
অভিযান চালিয়ে পাপিয়া-দম্পত্তিকে আটক করেছে র্যাব। সাধারণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমাসহ যাবতীয় কাজ করে থাকে। কিন্তু বিশেষ কিছু মামলায় র্যাব মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পাপিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেহেতু র্যাব অভিযানের পর প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় পায়নি এবং মনে হয়েছে যে, পাপিয়া ক্যাসিনো থেকে শুরু করে আরও অনেক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে সে জন্য ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
এর আগে, ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্পৃক্ত খালেদ ভূঁইয়া, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, লোকমান হোসেন, শফিকুল ইসলাম, রাজীব কমিশনারসহ ক্যাসিনো হোতাদের র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
র্যাব সুত্র জানিয়েছে, পাপিয়ার অপরাধ জগত অনেক বড়। এত বড় অপরাধ জগত নিয়ে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ ছিল না। তার আগেই তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত রিমান্ডে পাঠায়। তারা এখন পুলিশের কাছে রয়েছে। র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে তাই পুলিশও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে না। পাপিয়া অনেক চালাক হওয়ায় তিনিও সহজে কোনো কিছু বলেননি র্যাবকে। ক্যাসিনো, হুন্ডি, মদ, দেহ ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ নানান অপকর্মে জড়িত পাপিয়া দম্পত্তি। র্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করলে অনেক কিছু আড়ালেই থেকে যেতে পারে।
এদিকে পাপিয়াকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিস্কারের পর তার আশ্রয় প্রশ্রয়কারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। যারা পাপিয়াকে রাজনীতির ওপর পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তারাও ছাড় পাবেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী এবং তাদের আরও দুই সহযোগীসহ গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গমন গেট পার হওয়ার সময় র্যাবের হাতে আটক হন। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা, ইয়াবা, মদ ও জাল মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদের নিয়ে নরসিংদী ও ফার্মগেটের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।
অভিযানে ফার্মগেটের বাসা থেকে নগদ ৫৮ লাখ টাকা, অবৈধ পিস্তল ও গুলি, বিদেশি মুদ্রা ও মদ উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় বিশেষ ক্ষমতা ও অস্ত্র আইনে দুইটি এবং বিমানবন্দর থানায় মাদক, অর্থপাচার ও জাল মুদ্রা রাখার অভিযোগে একটি মামলা করে র্যাব। এসব মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
রিমান্ডের আগে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব পাপিয়ার বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টিও জানতে পারে। থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া ও নেপালে অর্থ পাচারের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে র্যাব। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার বলে মনে করছে র্যাব।
আরও পড়ুন
‘পাপিয়ার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করবে দুদক’
এবার পাপিয়ার ক্যাসিনো সম্পৃক্ততার খোঁজে র্যাব
আরও ২ মামলায় ৫ দিন করে রিমান্ডে পাপিয়া ও মফিজুর
যেভাবে বাড়ি-গাড়ি-টাকার মালিক পাপিয়া-মফিজুর দম্পতি
পাপিয়া প্রতিদিন বারের বিলই দিতেন আড়াই লাখ টাকা!
পাপিয়া যুব মহিলা লীগ রিমান্ড র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব