Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এমপি হতে চেয়েছিলেন পাপিয়া, খরচ করেছেন ১০ কোটি টাকা


২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:২৬

শামীমা নূর পাপিয়া (ছবি: ফেসবুক)

ঢাকা: যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ জন্য তিনি ১০ কোটি টাকা খরচও করেন। এ ছাড়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগাতে তিনি খরচ করেছিলেন তিন কোটি টাকা।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রিমান্ডে থাকা পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র এ সব তথ্য জানায়।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য পাপিয়া উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। এ জন্য তিনি বড় অংকের টাকাও বিনিয়োগ করেন। কিন্তু যারা পাপিয়াকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা ব্যর্থ হন। ওইসব নেতা মোটা অংকের টাকা নিয়েছিলেন যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাপিয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করে নমিনেশন পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করার সাহসই পাননি তারা।’

রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পাপিয়া জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী লীগ, কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এবং সভাপতিমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন নেতাকে পাপিয়া অন্তত ১০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। বিনিময়ে চেয়েছিলেন নরসিংদী থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন। সেটি না হওয়ায় ওই বিনিয়োগটি বিফলে যায়। প্রচণ্ডভাবে মানসিক বিষণ্নতায় পড়েন পাপিয়া। শুরু হয় তার আগের চেয়ে বেপরোয়া জীবন-যাপন। এভাবেই একসময় তিনি অপরাধ জগতের সম্রাজ্ঞী বনে যান। একের পর এক অপরাধ কর্মে লিপ্ত হতে শুরু করেন। আর তাকে এসব কাজে সহযোগিতা করেন স্বামী সুমন চৌধুরী ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা।

বিজ্ঞাপন

গোয়েন্দারা জানান, পাপিয়া নিজস্ব ক্যাডারবাহিনী কিউ অ্যান্ড সি’র সদস্যদের দিয়ে মাফিয়া প্রধান হয়ে যান। কিউ অ্যান্ড সি’র সদস্যরা মাদক ব্যবসা, চাঁদা তোলা, মাসোহারা আদায়, তুলে এনে টাকা আদায়, অনৈতিক কাজ করানো এবং জমি দখলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা পাপিয়ার হাতে তুলে দিতেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি ও প্লট কেনেন। এ ছাড়া পাঁচতারকা হোটেলে বসে সময় কাটাতেন। সেখানেও কম বয়সী তরুণীদের জোর করে ধরে এনে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করতেন। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তরুণীদের গোপন মেলামেশার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করতেন পাপিয়া। এভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন পাপিয়া-সুমন দম্পতি।

গোয়েন্দা পুলিশ গত তিন দিন ধরে পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কখনো এককভাবে আবার কখনো দুজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দুই সহযোগী সাব্বির ও তায়্যিবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দারা।

সাব্বির ও তায়্যিবার বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, সাব্বির সবসময় সুমন চৌধুরীর পিএস হিসেবে কাজ করতেন। আবার কখনো পিস্তল পকেটে নিয়ে বডিগার্ডের দায়িত্ব পালন করতেন। অন্যদিকে শেখ তায়্যিবা পাপিয়ার দেহরক্ষী আবার কখনো পিএস হিসেবে কাজ করত। এমনকি তাকেও বড় নেতাদের কাছে সুবিধা আদায়ের জন্য পাঠাতেন বলে জানিয়েছেন তায়্যিবা। তবে গত একবছর থেকে তায়্যিবাকে কোথাও পাঠাতেন না পাপিয়া।

পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর অপরাধ জগত সম্পর্কে তায়্যিবা পুলিশকে জানিয়েছে, অনেক সময় চাহিদা মত থাই, নেপালি, ইন্ডিয়ান, ভুটানি ও রাশিয়ান মেয়েদের নিয়ে আসা হতো। তাদের উচ্চমূল্যে বিভিন্ন কাস্টমারের কাছে পাঠানো হতো। এছাড়া বিমানবন্দরে কোনো ঝামেলা হলে সুমন চৌধুরী ও পাপিয়া মেটাতেন। পার্বত্য অঞ্চল থেকেও পাহাড়ি মেয়েদের নিয়ে আসতেন পাপিয়া।

ডিবি জানায়, এখন পর্যন্ত পাপিয়ার অন্ধকার জগতের বেশকিছু তথ্য মিলেছে। সেগুলোর আরও যাচাই-বাছাই চলছে। অর্থের উৎসের খোঁজ খানিকটা মিলেছে। তবে এর পেছনে আর কেউ জড়িত কিনা তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

ডিবি পুলিশ সারাবাংলাকে আরও জানায়, ২০১৫ সালের দিকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পাপিয়া খরচ করেছিলেন তিন কোটি টাকা। এছাড়া উপঢৌকন হিসেবে প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়েছিলেন বিশেষ উপহার। তাদের নির্দেশেই ওই সময় পাপিয়া যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পাপিয়ায় বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘পাপিয়াসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তারা। সেসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। অর্থপাচারের মামলাটি সিআইডি দেখবে। তবে তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অর্থপাচারের বেশকিছু তথ্য মিলেছে। অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের তথ্যও মিলেছে।’

‘রিমান্ডের আরও সময় বাকি আছে। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

‘পাপিয়ার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে’
পাপিয়া দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে অনুমতির অপেক্ষায় র‌্যাব
‘পাপিয়ার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করবে দুদক’
এবার পাপিয়ার ক্যাসিনো সম্পৃক্ততার খোঁজে র‌্যাব
যেভাবে বাড়ি-গাড়ি-টাকার মালিক পাপিয়া-মফিজুর দম্পতি

শামীমা নূর পাপিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর