Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন যেভাবে


২১ মার্চ ২০২০ ২২:২১

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ব্যক্তির দাফন বা শেষকৃত্য কিভাবে হবে? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে আলোচনা। কারণ শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীর থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শংকা থাকে। আর তাই এই রোগে মৃত ব্যক্তিকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়া ছোঁয়াও যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল অনুযায়ী একটি নির্দেশনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন বা সৎকার সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনায় কিছু সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। নির্দেশনাটি মৃতদেহ থেকে অতিরিক্ত ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এতে হাসপাতাল বা বাড়ি থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ, পরিবহন ও দাফনসহ প্রতিটি পর্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে বা সন্দেহভাজন কারও মৃত হলে মৃতদেহ সরানো, সৎকার বা দাফন শুরুর আগে অবশ্যই সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) জানাতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির নির্দেশনা অনুযায়ী, চার সদস্যের একটি দল সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ সৎকার বা দাফনের জন্য প্রস্তুত করবে। মৃত্যুর স্থানেই মৃতদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। দলের নেতা মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নির্দিষ্ট কোনো অনুরোধ থাকলে তা জেনে নেবেন। কোথায় কবর দেওয়া হবে সেটিও ঠিক করে রাখতে হবে।

নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মরদেহের গোসল করা যাবে না। এক্ষেত্রে পরিবারের অনুরোধ থাকলে মরদেহ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম বা পানি ছাড়া অজু করানো যাবে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে কাফনের কাপড়ের জন্য অনুরোধ থাকলে সেলাইবিহীন সাদা সুতির কাপড় কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কাফনের কাপড় প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তার ওপর মরদেহ রাখতে হবে এবং দ্রুত ব্যাগের জিপার বন্ধ করতে হবে। ব্যাগে কাফনের কাপড় দেওয়ার সময় যারা মরদেহ উঁচু করে ধরবেন তাদের অবশ্য সুরক্ষা পোশাক পড়ে থাকতে হবে।

মৃতদেহ সৎকারের জন্য মৃতদেহের সব ছিদ্রপথ (নাক, কান, পায়ুপথ ইত্যাদি) তুলা দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কোনো তরল গড়িয়ে না পরে। এরপর সংক্ষিপ্ত রুটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মৃতদেহ সমাধিস্থলে নিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করা হয় নির্দেশনায়।

নির্দেশনায় মৃতদেহ পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি সম্পর্কেও বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যাত্রাকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মৃতদেহটি দাফন পরিচালনাকারী দলের এর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়িতে দুটি অংশ থাকতে হবে। যাতে চালক ও পরিবহন কামরার মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক কাঁচ বা প্লাস্টিকের আবরণ থাকে। পরিবহনের পর ব্যবহৃত বাহনটি জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এ সময় জীবাণুমুক্ত করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে। দাফনের সময় মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগটি কখনোই খোলা যাবে না।

নির্দেশনায় সমাধিস্থলের বিষয়ে বলা হয়, দাফনের পর কবর বা সমাধিস্থানটি ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর মাটির স্তর দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি দাফন করা স্থানের আশপাশ উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারও করতে হবে। এছাড়া মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন সেই স্থানটিও যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা এবং মৃতদেহ দাফনের পর সেই স্থান ভালোভাবে ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে।

করোনাভাইরাস রোগে সন্দেহভাজন কোনো রোগীর মৃত্যু হলেও সমান সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআর এ যোগাযোগ করলে সেখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এসে মৃত ব্যক্তির মুখের লালার নমুনা নিয়ে নিশ্চিত করবেন যে মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি-না তা জেনে নিতে হবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও, করোনা রোগীর মৃতদেহ কখনোই ময়নাতদন্ত করা যাবে না। আর মৃতদেহ পোড়ালে দেহাবশেষ বা ছাই থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না বলে জানানো হয়েছে নির্দেশনায়।

করোনাভাইরাস দাফন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর