‘দূরত্বের স্বাধীনতায়’ করোনা প্রতিরোধের ডাক
২৬ মার্চ ২০২০ ১৯:২৭
ঢাকা: স্মৃতিসৌধের বেদিতে নেই পুষ্পমাল্য, নেই জনতার ঢল। ফুল হাতে দেখা মেলেনি কোনো নবীনের। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে নেই কেউ। আবালবৃদ্ধবনিতার সেই চিরচেনা কোলাহল নেই স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে। শিশুদের কলরবে মুখরিত হয়নি শিশুমেলা। ক্যাম্পাসগুলোতেও নেই শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। সব নীরব। নিস্তব্ধ। জনশূন্য সড়ক, মহাসড়কগুলো। এ যেন কারফিউয়ের ঢাকা। না এটা কারফিউয়ের ঢাকা নয়, সমগ্র বাংলাদেশের চিত্রই এখন এমন। পুরো দেশজুড়ে চলছে কোয়ারেনটাইন বা সামাজিক দূরত্ব।
চীন থেকে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস কোভিড-১৯’র বিস্তার রোধে এ কোয়ারেনটাইন। এবার যুদ্ধ করোনার বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধ অস্ত্র হাতে নয়, ঘরে নিজেকে বন্দি রেখে ভাইরাস থেকে পৃথিবীকে রক্ষার যুদ্ধ। তাই জনশূন্য আজকের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এ এক অন্যরকম ২৬শে মার্চ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রতিবছর ২৬শে মার্চ আড়ম্বরপূর্ণভাবে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু মহামারি করোনার প্রভাবে এবার ঘরে বসেই দিনটি উদযাপন করছে বাঙালিরা। এবার নিজেদের ঘরের মধ্যে বন্ধি রেখে জয়ী হতে চায় জীবনযুদ্ধে। এ যুদ্ধ শুধুমাত্র বাঙালির নয়, এ যুদ্ধ বিশ্বের সকল মানুষের।
বৃহস্পতিবার (২৬শে মার্চ) স্বাধীনতা দিবস হলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোথাও কোনো জনসমাগম চোখে পড়েনি। মাইকে নেই স্বাধীনতার গান, রাজপথে নেই বিজয় মিছিল, ক্যাম্পাসে নেই কনসার্ট, বাজারে নেই ভিড়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বেরুচ্ছে না। স্তব্ধ গোটা শহর। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা রামপুরা, হাতিরঝিল, গুলশান, নিউমার্কেট, শাহবাগ, ফার্মগেট, মহাখালী এখন জনমানবশূন্য। যেখানে সব সময় দেখা যেত জনতার ভিড়, সেখানে এখন পিনপতন নীরবতা। নেই কোনো গণপরিবহন। ফাঁকা সড়কে চলছে দুয়েকটি রিকশা। টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সব মিলিয়ে এ যেন অচেনা এক শহর।
রিকশা চালক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এমন ঢাকা আমি জীবনেও দেখিনি। পুরো শহরই ফাঁকা। ঈদের ছুটিতেও এমন হয় না। ওই সময় গাড়ি কম থাকলেও অনেক রিকশা থাকে। অনেক যাত্রী থাকে। মানুষে ভরপুর থাকে। আজকে তো মানুষই নাই।’
সিএনজি চালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভাই মানুষ আছে আতঙ্কে। আগে তো বাঁচতে হবে। তারপর সে অন্য কিছু।’ আপনি বের হয়েছেন কেন?- জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের তো পেট চালাতে হবে। গাড়ি না চালালে খামু কী?’
প্রাণঘাতী করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গণজমায়েত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বাতিল হয়েছে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানও। বন্ধ রয়েছে যানবাহন, লকডাউন করা হয়েছে অনেক এলাকা। সবাইকে ঘরে থাকার জন্য শহরজুড়ে মাইকিং চলছে। খুব জরুরি দরকারে কেউ বের হলেও পুলিশকে যথাযথ কারণ দেখাতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের এই মহামারি থেকে মানুষকে বাঁচাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা বলবৎ থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) এ পর্যন্ত পৃথিবীর ৪ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর এতে মারা গেছে প্রায় ২২ হাজার মানুষ। করোনা এখন মানুষের জন্য মহাআতঙ্ক। এই ভাইরাসের এখনও কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই করোনা থেকে রক্ষায় হোম কোয়ারেনটাইন বা সামাজিক দূরত্ব বা সঙ্গ নিরোধ-ই একমাত্র পথ।
করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সঙ্গ নিরোধ সামাজিক দূরত্ব স্বাধীনতা দিবস