Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুধের দাম অর্ধেক, লোকসানের মুখে দেড় লাখ গো-খামারি


৩ এপ্রিল ২০২০ ০৯:১০ | আপডেট: ৩ এপ্রিল ২০২০ ০৯:২২
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিরাজগঞ্জ: করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটির আওতায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা, আড়ংসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা। সপ্তাহখানেক হলো এসব প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ না করায় উৎপাদিত খুচরা বাজারে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে খামারিদের। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ছেন সিরাজগঞ্জ-পাবনা অঞ্চলের দেড় লাখ গো-খামারি।

শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি, রুপবাটি, কর শালিকা, পোতাজিয়া, কায়েমপুর এলাকার দুগ্ধ খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খামারিদের দুধ বিক্রির প্রধান ভরসা মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে ছোটবড় সব কারখানা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরেও কমে গেছে দুধের চাহিদা। দই-মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকার কারণে তারাও কিনছেন না দুধ। এ কারণে খুচরা বাজারে কিংবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে দুধ।

বিজ্ঞাপন

পোতাজিয়া এলাকার রফিকুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, দুলাল উদ্দিন, নতুন মাদলাপাড়ার জাহাঙ্গীরসহ একাধিক খামারি জানান, প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনে খরচ পরে ৩৫-৩৮ টাকা। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা সেই দুধ ৩৬-৪০ টাকায় বিক্রি করতেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠান দুধ না কেনায় এখন খুচরা বাজারে তাদের দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। সারাদিন বসে গ্রাহক না পেয়ে ১০ টাকা কেজিতেও দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে অনেককে।

শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী জানান, বাজারে ক্রেতা নেই। খামারিরা দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। দুধ বিক্রি করতে না পেরে তারা ভ্যানে করে দুধ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ২০ থেকে ২৫ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করছে। এতে তাদের গো-খাদ্যের দামই উঠছে না। ফলে দুধের রাজধানী খ্যাত পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় কৃষকেরা পানির দরে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তার ওপর হঠাৎ করেই গো-খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আরও বিপাকে পড়েছেন।

ওয়াজ আলী বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এ এলাকায় প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি গো-খামার রয়েছে। প্রতিদিন এ অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। প্রায় সাড়ে ৫ লাখ দুধ লিটার সংগ্রহ করে মিল্কভিটা, আড়ংসহ ২০টির মতো প্রক্রিয়াজাত কারখানা। বাকি দুধ খামারিরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ খুচরা বাজারে বিক্রি করে।

পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সেফ মিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ শেখ বলেন, আমরা প্রতি দিন গড়ে আড়াই হাজার লিটার দুধ ঢাকায় পাঠাই। কিন্তু বর্তমানে ৫শ লিটার দুধও পাঠাতে পারছি না।

গাড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, দুদিন ধরে ১০ টাকা কেজিতেও দুধ বিক্রি হচ্ছে। খামারিরা হাটে-বাজারে এমনকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফেরি করে দুধ বিক্রি করছে।

হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, একদিকে দুধের দাম কম, অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। যানবাহন সংকটের কারণে গো-খাদ্য আনতেও অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে খামারিদের। ফলে আরও সংকটে পড়ছেন তারা।

রুপবাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম শিকদার বলেন, করোনার প্রভাবে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা এলাকার সব দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানায় দুধ সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দুগ্ধশিল্পে ব্যাপক ধ্বস নামার আশঙ্কা রয়েছে। এতে খামারিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বে।

বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার উপমহ্যাব্যবস্থাপক ডা. ইদ্রিস আলী জানান, করোনার সংক্রমণরোধে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। এছাড়াও  ৯০০ মেট্রিক টন উৎপাদিত গুঁড়া দুধ অবিক্রিত অবস্থায় গুদামে মজুত রয়েছে। ফলে নতুন করে গুঁড়া দুধ উৎপাদন করাও সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে কারখানা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। দুধ সংগ্রহও করা হচ্ছে না। এতে কৃষকের সামিয়ক অসুবিধা হলেও আমাদের কিছু করার নেই।

গো-খামারি দুগ্ধ সংগ্রহ প্রতিষ্ঠান দুধের দাম পাবনা সিরাজগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর