Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা, দায় ২ সিটির ঘাড়ে’


২২ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৪৩

ঢাকা: করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট হওয়া পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে নিন্ম আয়ের মানুষের মধ্যে। তাদের সংকট মোকাবিলায় দেশের অনেক বিত্তবান মানুষ এবং সেবাদানকারী সংস্থা এগিয়ে আসছে নিজ উদ্যোগে। রাজধানীতেও দেখা যাচ্ছে এ চিত্র। অসহায় মানুষের মাঝে তারা বিতরণ করছেন খাবার ও আর্থিক সহায়তা। তবে অভিযোগ উঠেছে, এসব সহায়তা অনেকে পাচ্ছেন আবার অনেকে পাচ্ছেন না, রয়েছে সমন্বয়হীনতাও। কোথাও কোথাও অভিযোগ রয়েছে ত্রাণ প্রত্যাশীদেরকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহের মাধ্যমে এসব খাদ্য-সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এসব অব্যবস্থাপনার দায়ভার এসে সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে পড়ছে বলে মনে করছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ।

তবে এসব অভিযোগ সত্য হলেও সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন দুই সিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অনেকে পাচ্ছে অনেকে পাচ্ছে না এমন অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ এমন অভিযোগের কারণেই হটলাইন চালু করা হয়েছে। যাতে করে যারা সহায়তা থেকে বাদ পড়ছে তারাও যেন হটলাইন সেবার মাধ্যমে সহায়তা পায়।

কর্মকর্তাদের দাবি, সিটি করপোরেশন থেকে যেসব খাদ্য সহায়তা কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলো বিতরণ করার আগে প্রতিটি ওয়ার্ডের নিম্ম আয়ের মানুষের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব তালিকা অনুযায়ী তাদের মাঝে খাদ্য-সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তালিকা করার সময় হয়তো কেউ কেউ বাদ পড়েছে। তবে বাদ পড়া কেউ যদি সংশ্লিষ ওয়ার্ড কাউন্সিলদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকেও তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।

তবে তার চেয়ে বড় সমস্যা হল সমন্বয়হীন ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ। এ বিষয়ে তারা বলেন, অনেকাংশে দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তি উদ্যোগে হুট করে কয়েকজন অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করল। আর এসব বিতরণ থেকে বড় একটি অংশ বাদ পড়ছে। যারা বাদ পড়ছে তখন তারাই ক্ষোভ ছড়ায়। যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এজন্য ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে সিটি করপোরেশনের সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দুই সংস্থার কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসসিসি গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় ৫০ হাজার নিম্ম আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য-সামগ্রী বিতরণ করছে। সংস্থাটি প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০ পরিবার করে মোট সাড়ে ৩৭ হাজার এবং হটলাইনে সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করেছে। তবে এ সংস্থার আওতাধিন এলাকায় এখনো ত্রাণের জন্য অসহায়দের সাহায্য চাইতে দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন তারা। তাদের মতে করপোরেশনের দেওয়া সহায়তা অনেকাংশেই চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাই ব্যক্তি উদ্যোগেও সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির ত্রাণ সহায়তার প্রধান সমন্বয়কারী রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ সরদার সারাবাংলাকে বলেন, ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য-সামগ্রী কাউন্সিলরদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা জানি এসব সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। তাই আজ আবার ত্রাণ সহায়তা কমিটি বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে পুনরায় কিভাবে সহায়তা পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ এ ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি উদ্যোগের ত্রাণও ডিএসসিসির ফান্ডে জমা দিয়েছে। তবে অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে আমাদেরকে না জানিয়ে দিচ্ছে। এতে করে কিছু বিপাকে পড়তে হয়। কারণ যারা দিচ্ছে তারা হয়তো সামর্থ্য অনুযায়ী একশ বা দুইশ পরিবারকে দিচ্ছে। কিন্তু একই সময়ে বঞ্চিত হচ্ছে আরও পাঁচশ পরিবার। তখন ওই বঞ্চিতরা অভিযোগ তোলে। তাই যদি ব্যক্তি উদ্যোগের ত্রাণগুলোও করপোরেশনের ফান্ডে জমা হয় তাহলে সুষম বণ্টন হতো।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনসিসিও প্রতিটি ওয়ার্ডে চাহিদা অনুযায়ী, ১২-১৫ টন করে চাল বিতরণ করছে কাউন্সিলরদের কাছে। সেই সঙ্গে ১ লাখ থেকে দেড় টাকা করে নগদ অর্থও দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলরদেরকে ডাল-আলুসহ অন্যান্য সামগ্রী প্যাকেট করে বিতরণের জন্য।

এ সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাউন্সিলর জানায়, সিটি করপোরেশন যে পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে তাতে চাহিদা থেকে যায়। এজন্য তারা ব্যক্তি উদ্যোগেও সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি প্রতিটি পরিবারে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। এতে করে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় অসন্তোষও। যদি আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিতরণ করা হতো তাহলে সবাইকে সমহারে বণ্টন করা যেত। এতে কেউ বঞ্চিত হতো না। তাই আমার আহ্বান যারা ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ দিতে চায় তারা করপোরেশনের ফান্ডে জমা দিতে পারেন অথবা সংশ্লিষ্ট এলাকার করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে সেগুলো বিতরণ করুন।

করোনা কোভিড ত্রাণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর