বোরোর বাম্পার ফলন, তবে দাম পাচ্ছেন না কৃষক
৬ মে ২০২০ ০৮:২০
ঢাকা: দেশের হাওরাঞ্চলে বোরা ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৯৩ শতাংশ জমির ধান এরই মধ্যে কাটা শেষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে কৃষক সেই তুলনায় ধানের দাম পাচ্ছেন না। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে ধান। কৃষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেপারিরা (ক্রেতা) আসতে পারছেন না। ফলে ধানের দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, হাওরের ৭ জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। আর মঙ্গলবার (৫ মে) পর্যন্ত এর মধ্যে ৪ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছ, যা মোট আবাদি জমির প্রায় ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে সারাদেশে এবার প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টরের মতো জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
অধিদফতর আরও বলছে, এ বছর হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ টন। অন্য বছরগুলোতে সাধারণত হাওরে ধানের গড় ফলন ৩ দশমিক ৮৫ টন। সে হিসাবে হাওরে বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষকরা।
জানতে চাইলে কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, এবার হাওরে ধানের গড় ফলন ৪ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা এবার খুবই খুশি। আর ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে ৭৮০ টাকা মণেও ধান বিক্রি হয়েছে। তখনই আমরা ভেবেছিলাম পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে হয়তো দাম এতো বেশি থাকবে না। কারণ কাঁচা ধানের দাম সব সময় কম থাকে। আবার গভীর হাওরে বা দূরবর্তী হাওরেও ধানের দাম কম থাকে। সেখানে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা মণে ভেজা ধান বিক্রি অস্বাভাবিক না।
ধানের ফলনে এবার হাওরের কৃষকরাও খুশি। মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম নিয়েও তারা তৃপ্তি প্রকাশ করেছিলেন। তবে এখন তারা বলছেন, আগের চেয়ে ধানের দাম কমে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে তাতে আবাদে খুব একটা লাভ থাকবে না। আবার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, ধানের দাম কমে গেলেও এখনো তা অন্য বছরের চেয়ে বেশি রয়েছে।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কৃষক ফরুক সারাবাংলাকে বলেন, ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফলন ভালো হয়েছে। দামও আছে মোটামুটি। এখন ভেজা ধান ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
একই উপজেলার আরেক কৃষক রনি ভূঁইয়া বলেন, এখনো ধান কাটা শেষ হয়নি। ব্রি ২৯ ধান মাঠে রয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তের ধান কাটতে গিয়ে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ এখন এলাকার শ্রমিকরা তাদের নিজেদের ধানও কাটছে। আর বাইরে থেকেও শ্রমিক আসছে না। তবে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। কারণ এলাকায় বাইরের বেপারিরা আসতে পারছে না। তাই ধানের দাম কম।
ওই এলাকার আরেক কৃষক আবু সালেক সারাবাংলাকে বলেন, ধানের ফলন ভালো হয়েছে, কিন্তু দাম কম। ৫৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। একজন শ্রমিকের দামও ৫০০ টাকা। যে দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে, তাতে তেমন লাভ থাকবে না।
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার কৃষক কৃষক শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ধান কাটা শেষ। এখন কাঁচা ধান শুকাচ্ছি। সবমিলিয়ে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও বেশি রয়েছে। প্রথম দিকে ৭৫০ থেকে ৭৭০ টাকা মণে ধান বিক্রি হয়েছে। এখনো শুকনো ধান ৭০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। আর ভেজা ধান ৬২০ টাকায়। সে হিসাবে ধানের দাম একটু কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে বেপারি ও ধান বেশি থাকায় দাম বেশি ছিল। এখন ধানও কম, বেপারিও কম। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ধানের দাম অনেক বেশি। অন্য বছর এ সময় ৫০০ টাকা মণেও ধান বিক্রি হয়েছে। এ বছর তো এখনো ৭০০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কৃষক বিপ্লব রায় সারাবাংলাকে বলেন, ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আমরা এখন ৫৩০ টাকা মণে কাঁচা ধান বিক্রি করছি। অন্য এলাকার চেয়ে আমাদের এলাকায় ধানের দাম কম। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণেই এখানে ধানের দাম কম। একই জেলার দিরাই উপজেলার কৃষক পাশা সারাবাংলাকে বলেন, হাওরে বোরে ধান কাটা এখন শেষ পর্যায়ে। ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। ধানের দামও ভালো আছে। ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণে কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, এবার সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা মণে ধান কিনছে। তবে এখনো কৃষকের কাছ থেকে সরকার ধান কেনা পুরোদমে শুরু করেনি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে সরকার যে ধান কেনে, তা মূলত শুকনো ধান। কিন্তু অনেক কৃষককেই নগদ টাকার জন্য মাঠ থেকেই ধান বিক্রি করে দিতে হয়। সেই ধান মূলত ভেজা ধান হওয়ায় তারা দাম কিছুটা হলেও কম পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব কৃষক ধান শুকিয়ে সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন, তারা যথেষ্টই লাভবান হবেন।