Monday 30 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে বিশৃঙ্খল চিকিৎসা খাত, কাঠগড়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ


৪ জুন ২০২০ ১০:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারি হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দরজা বন্ধ। চিকিৎসকেরা চেম্বারে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন না। কোভিড-১৯ ও নন-কোভিড রোগীরা চিকিৎসার জন্য হাহাকার করছেন। চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর খবর আসছে প্রতিনিয়ত। সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে এবং ফলাফল পেতে পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা। শনাক্তের আগেই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর দুই মাসের মাথায় এসে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপকে দায়ী করে বক্তব্য আসছে বিভিন্ন মহল থেকে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ৩ এপ্রিল। গত দুইমাসে চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৭৯ জনের।

সরকারি হাসপাতালে অস্বাভাবিক চাপ

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যা ও ১০টি আইসিইউ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যা এবং ফৌজদারহাটে ৫০ শয্যার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। ফৌজদারহাটে বেসরকারি চট্টগ্রাম ফিল্ড হসপিটালেও করোনায় আক্রান্ত এবং করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন চট্টগ্রামে গড়ে ৫৪ জন রোগী আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে এখন শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে সিট খালি নেই। আইসিইউতেও খালি নেই। অনেককে চাইলেও আমরা আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারছি না। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম শহরে কমপক্ষে আরও ৬০টি আইসিইউ শয্যা জরুরি ভিত্তিতে চালু করা প্রয়োজন।’

বেসরকারি হাসপাতালের দুয়ার খুলছে না

দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর গত ৪ এপ্রিল এক সভায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরসহ ব্যবহারের সুবিধাসহ ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করেছিল করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত বিভাগীয় কমিটি। হাসপাতালগুলো হচ্ছে— পার্কভিউ হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল (ইউনিট-২), ডেল্টা হাসপাতাল, সিএসটিসি হাসপাতাল, সিএসসিআর, ন্যাশনাল হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও ম্যাক্স হসপিটাল। চার পর্যায়ে তিনটি করে হাসপাতাল ক্রমানুসারে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল ওই সভায়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের দুইমাস পার হয়ে গেলেও একটি বেসরকারি হাসপাতালও চালু হয়নি। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ শয্যার সব হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, সেটিও মানেননি তারা। করোনায় আক্রান্ত দূরে থাক, সাধারণ রোগীও তারা ভর্তি করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার নিজেই করোনা আক্রান্ত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তিনি নিজেই তার মায়ের কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য চট্টগ্রামের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে চেয়ে ব্যর্থ হন। পরে তার মাকে ঢাকায় নিয়ে যান।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, চট্টগ্রামের আইনজীবী আবুল কাশেম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্বিবিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাবরিনা ইসলাম সুইটি, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের একান্ত সহকারী, শিল্পপতি মোহাম্মদ ইউনুচসহ অনেকেই করোনার উপসর্গ বা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে তারা চিকিৎসা পাননি।

সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংকট, বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ থাকা এবং চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসও বন্ধ থাকায় মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও করোনা মোকাবেলায় গঠিত কমিটির বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমানের।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা করোনার উপসর্গ নিয়ে অথবা অন্য কোনো রোগ নিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন অনেকেই মারা যাচ্ছেন। পত্রপত্রিকায় আমরা যা জানছি, মৃত্যুর সংখ্যা তার চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি। এই মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসন। কারণ করোনার সংক্রমণ মোকাবেলায় তারা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। এই ব্যর্থতার দায় তারা এড়াতে পারবে না।’

‘চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল চালু না করে ক্লিনিক মালিকদের সিন্ডিকেট কিছু চিকিৎসক নেতাকে নিয়ে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল বানানোর নামে দুই মাস ধরে নাটক করেছে। অথচ সেই হাসপাতালটিও চালু করতে হচ্ছে সরকারিভাবে। মাঝখান থেকে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এই হাসপাতাল দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু চালুর পরও পরিবেশ না থাকায় সেখানে রোগী যাচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামের ক্লিনিক মালিকদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতপন্থী। আওয়ামী লীগের একশ্রেণির চিকিৎসক নেতা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। ফলে তারা সংকটের সময় এগিয়ে আসছে না। বরং সরকারি সিদ্ধান্ত না মানার মতো ধৃষ্ঠতা দেখাচ্ছে,’— বলেন মিনহাজুর রহমান।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২৬ মে দু’টি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসা চালুর নির্দেশ দেয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহেও হাসপাতাল দু’টি চালু হয়নি। হাসপাতাল দুইটি হচ্ছে— বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। হাসপাতাল দুটি ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, যা সময়ক্ষেপণের কৌশল বলে আলোচনা চলছে।

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অবকাঠামোগত কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ৩৬ জনের মতো ডাক্তার ও সমপরিমাণ নার্স লাগবে। সেগুলো নিশ্চয় সরকারিভাবে দেওয়া হবে। কারণ কোভিড হাসপাতাল চালু করলে তো সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে তিন বছরের জন্য করতে হবে। এত দীর্ঘসময় তো আমরা পকেটের টাকা দিয়ে হাসপাতাল চালাতে পারব না। এসব বিষয় সুরাহা হতে হবে। আর আমাদের হাসপাতাল চালু করা হচ্ছে কেবল পুলিশ সদস্যদের জন্য। আগে এমওইউ সাইন হতে হবে। তারপর চালু করা যাবে।’

স্বাচিপ নেতা মিনহাজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে অনেক স্বাস্থকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সেখানে লোকবল নাই। অথচ সেটাকেই কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ডাক্তার-নার্স নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এগুলো হাস্যকর।’

এ অবস্থায় গত ৩১ মে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ ও নন কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ও তদারকি করার জন্য সাত সদস্যের একটি সার্ভেইল্যান্স কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। কমিটিতে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (উন্নয়ন) আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটিতে বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলীকে সদস্য করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা। অভিযোগ আছে, লিয়াকত আলী এবং একজন প্রভাবশালী বিএমএ নেতার নেতৃত্ব গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চালু না করতে মদত দিচ্ছে।

লিয়াকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য হাসপাতালের কথা জানি না, আমার ম্যাক্স হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি আছেন পাঁচ জন। নন-কোভিড রোগীর কোনো সিট খালি নেই। অন্য হাসপাতালগুলোতেও আস্তে আস্তে রোগী ভর্তি হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করা ঠিক হচ্ছে না। প্রথমে আমাদের করপোরেট হাসপাতাল আর ক্লিনিকের পার্থক্য বুঝতে হবে। চট্টগ্রামে বড় আকারের একটিও করপোরেট হসপিটাল নেই। যেসব ক্লিনিক আছে, এর আসা-যাওয়ার পথ একটি। অনেক ক্লিনিকে লিফটও একটি। কোভিড-১৯ রোগী আর নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা একসঙ্গে একই ক্লিনিকে করা সমীচীন হবে না। তাহলে তো নন-কোভিড রোগীরাও কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকবে। এসব ক্লিনিকে পৃথক কোনো আইসিইউ নেই, যেখানে কোভিড বা নন-কোভিড রোগী ভাগ করে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। যদি চিকিৎসা দিতে হয়, তাহলে বিদ্যমান আইসিইউ থেকে ভেন্টিলেটর নিয়ে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আলাদা কেবিন করা সমীচীন হবে। আইসিইউ এক্সপার্ট যারা, তাদের অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে সার্ভিস দিচ্ছে। এদের অনেকেই আবার করোনায় আক্রান্ত। এই অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ চালু রাখা আসলেই কষ্টকর।’

করোনা মোকাবেলায় গঠিত স্বাচিপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী ফয়সল ইকবাল আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, কোভিড ও নন-কোভিড হাসপাতাল আলাদা করা হোক। কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি করতে হলে সেখানে অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা যাবে না। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পর্যায়ক্রমে একটি একটি করে বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হোক। অবশ্যই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হবে, এই প্রস্তাব আমরা কমিটিতেও দিয়েছি। আরেকটা অভিযোগ হচ্ছে, ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের ডাক্তাররা বিভিন্ন ল্যাবে-ক্লিনিকে কিংবা ভবনে পাশাপাশি চেম্বারে চিকিৎসা দেন। একজন করোনা আক্রান্ত রোগী যদি কোনো একজন ডাক্তারের চেম্বারে যান, তাহলে অন্য চেম্বারে আসা সাধারণ রোগীদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও তো তৈরি হয়ে যায়। মহামারিতে বিশ্বের যেকোনো দেশেই সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ থাকে।’

নমুনা পরীক্ষা নিয়ে বিড়ম্বনা চলছেই

এদিকে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে। চট্টগ্রামে বিআইটিআইডি, সিভাসু, চমেক ল্যাব ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবেও চট্টগ্রামের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু নমুনা দিতে গিয়ে যেমন বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে, ফলাফল পেতেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নমুনা দিন দিন বাড়ছে। পরীক্ষার সুযোগও বাড়ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব চালু হচ্ছে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানও খুব শিগগিরই নমুনা পরীক্ষা শুরু করবে। নমুনা সংগ্রহে বুথ করা হচ্ছে। হতাশ হলে চলবে না। রেলওয়ে হাসপাতাল আমরা করোনার চিকিৎসায় চালু করেছি। হলি ক্রিসেন্ট হসপিটাল চালু হয়েছে। সিটি করপোরেশন আইসোলেশন সেন্টার করছে। আমাদের সামর্থ্য সীমিত। এই সামর্থ্য নিয়েই আমরা করোনার সংক্রমণ সুন্দরভাবে মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করছি।’

কাঠগড়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘একধরনের নৈরাজ্য চলছে। চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য প্রশাসন বলতে কিছু আছে কি না, এটাই বোঝা যাচ্ছে না। সরকার ঘোষণা দিচ্ছে, কিন্তু চট্টগ্রামে এসে সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে— বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও নন-কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হোক। হটলাইন নম্বর দেওয়া হোক, রোগীরা যেন চিকিৎসা না পেলে অভিযোগ করতে পারে। স্বাস্থ্য বিভাগকে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালকে সরকার থেকে আর্থিক, প্র্যাকটিক্যাল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হোক। খুব জরুরি যে রোগীরা যেন উচ্চ চাপের অক্সিজেন পান। হাই ফ্লো নেজল ক্যানোলা (এইচএফএনসি) সাপোর্ট পেলে ৯৯ শতাংশ রোগীরই ভেন্টিলেশন লাগবে না। সুস্থ হয়ে যাবে।’

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-ভেন্টিলেটর আছে, তারা চিকিৎসা দিচ্ছে না। মানুষ মরছে। ওষুধের দাম বাড়ছে। চট্টগ্রামে কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মনে হচ্ছে, কোনো কোনো মহল পরিকল্পিতভাবে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এটা আপনারা যেমন দেখছেন, আমরাও দেখছি। আমি মাত্র যোগদান করেছি। আগের দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। এই মুহূর্তে এটুকু বলতে পারি, একটু সময় দেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সহসাই শুরু হবে। বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় একটা কমিটি করে দিয়েছেন। উনারা কাজ শুরু করেছেন। খুব শিগগিরই সংকট কেটে যাবে।’

কোভিড-১৯ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর