Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ দিনে আক্রান্ত আরও ৩৪ জন, লকডাউন বাড়ছে পূর্ব রাজাবাজারে


২১ জুন ২০২০ ২২:২৫

ঢাকা: দেশের প্রথম এলাকা হিসেবে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা পূর্ব রাজাবাজারে আজ দশম দিনের মতো চলছে লকডাউন। এর লক্ষ্যই ছিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। কিন্তু এই ১০ দিনে সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। লকডাউনের আগে এই এলাকায় যতজন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, এই ১০ দিনে প্রায় আরও ততজন ব্যক্তির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে পূর্ব রাজাবাজারে ১৪ দিনের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হলেও সে মেয়াদ বাড়ছে।

গত ৯ জুন মধ্য রাত থেকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলক লকডাউন চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ এলাকায় লকডাউনের আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন ৩৯ জন। লকডাউনের পর গত ১০ দিনে ১৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন আরও ৩৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। বর্তমানে এ এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৭৩ জন। এর মধ্যে মারাও গেছেন একজন।

সর্বোচ্চ ৫০ হাজার বাসিন্দার বসবাস এলাকা পূর্ব রাজাবাজার এলাকায়। লকডাউনের মধ্যেও এই এলাকায় ১০ দিনে ৩৪ জনের আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। লকডাউন বাস্তবায়নে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, বাইরের সঙ্গে এই এলাকার যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও এলাকার মধ্যেই মানুষজনের চলাচল হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ফলে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন- পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন: কঠোর ব্যবস্থাপনায় ফিরছে শৃঙ্খলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্ব রাজাবাজারে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিশ সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, আমরা লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছি মূল গেটে। এই গেট দিয়ে ঢোকা বা বের হওয়ার বিষয়টি আমরা দেখছি। কিন্তু ভেতরের এলাকায় যদি কেউ চলাচল করে, সেটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তিন দিন আগেও শুনেছি ২৪ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন। আজ শুনতে পাচ্ছি ৩৪ জন। তার অর্থ সংক্রমণ বাড়ছেই। বাসিন্দারা যতক্ষণ পর্যন্ত সতর্ক না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে ১৪ দিনের লকডাউন ২৮ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। তবে দ্বিতীয় ধাপে আপাতত ২১ দিন পর্যন্ত বাড়াতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

লকডাউনের পরিস্থিতি সম্পর্ক জানতে চাইলে ডিএনসিসির স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যে মধ্যে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি বাসিন্দাদের ঘরে রাখতে। কিন্তু তারপরও যদি কেউ বাইরে বের হয়ে অলিগলিতে ঘুরে বেড়ায়, সেটা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

লকডাউনের সময় বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে নির্দেশনা এলে আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত আছি। আর বাড়ানো উচিত বলে মনে করি।

আরও পড়ুন- লকডাউনের তৃতীয় দিনে পূর্ব রাজাবাজারে কমেছে ‘গেটের ভিড়’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লকডাউনের সমন্বয়কারী ডিএনসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, লকডাউন এলাকাটিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে কারো কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই তিনি সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন। যে কারণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি মনে হতে পারে। তবে আমরা সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যে লকডাউন কার্যকর করছি, সেটির ফল হয়তো অন্তত ১৪ দিন পর জানতে পারব।

সেক্ষেত্রে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না— জানতে তাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি এখনই নিশ্চিত নয়।

লকডাউনের সময় বাড়ানো এবং আক্রান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পূর্ব রাজাবাজার এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারজানা ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনই ভালো বলতে পারবে। আমরা সব তথ্য তাদের কাছে দিয়ে থাকি।

যোগাযোগ করা হলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে। তারাও মৌখিকভাবে পরিস্থিতির সার্ভিক বিবেচনায় সময় বাড়ানোর কথা জানিয়েছে। হয়তো আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাব। চিঠি পেলে বলতে পারব, কতদিন সময় বাড়বে।

মেয়র আরও বলেন, এই যে লকডাউনের দশম দিনেও আক্রান্তের সংখ্যা মিলছে, তাতে স্পষ্ট যে এতদিন হয়তো ভাইরাসটি কারও কারও শরীরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। সময় যত বাড়ছে, তত উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে যে যাদের শরীরে সুপ্ত অবস্থায় ভাইরাসটি ছিল এবং পরীক্ষা না করায় সে জানতে পারেননি তার শরীরে ভাইরাস আছে, তিনিও এলাকার অলিগলিতে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঘুরে বেড়িয়ে আরও মানুষের শরীরে ছড়িয়েছেন ভাইরাসটি। তাই আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বলেছিলাম হোল্ডিং নম্বরসহ কোভিড পজিটিভ ব্যক্তিদের তথ্য জানানোর জন্য। সেটি হল হয়তো আরও ভালো হতো।

আরও পড়ুন-

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন মঙ্গলবার রাত ১২টায়

পূর্ব রাজাবাজারে কড়া নিয়ন্ত্রণ চায় প্রশাসন, শঙ্কায় বাসিন্দারা

মধ্যরাত থেকে পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন, জোরদার হচ্ছে সেনা টহল

করোনা সংক্রমণ করোনায় আক্রান্ত পূর্ব রাজাবাজার রেড জোন লকডাউন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর