লঞ্চডুবিতে মৃতদের অধিকাংশ মুন্সিগঞ্জের, ১৬ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ
২৯ জুন ২০২০ ২২:৫৪
ঢাকা: রাজধানীর শ্যামবাজারে বুড়িগঙ্গা নদীতে মর্নিং বার্ড লঞ্চডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনদের কাছে। মৃতদের অধিকাংশই মুন্সিগঞ্জের নাগরিক বলে জানা গেছে। তবে মৃত ৩২ জনের মধ্যে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ১৬ জন। সরকারি হিসাবে বাকিদের তথ্য নেই।
যে ১৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাদের সবার বাড়িই মুন্সিগঞ্জে। কোনো না কোনো কাজে ঢাকায় আসছিলেন তারা। ঢাকা পৌঁছানোর ঠিক আগে আগে বুড়িগঙ্গায় সলিল সমাধি হয়েছে তাদের। কাজ শেষে স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রওনা দিলেও শেষ পর্যন্ত স্বজনদের কাছে পৌঁছেছে তাদের নিথর দেহ।
আরও পড়ুন- ‘বোন লাফ দিলেও মা পারেনি’
সোমবার (২৯ জুন) বিকেলে মিডফোর্ড হাসপাতালের মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ৩০টি মরদেহ। এসময় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডাব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে থেকে ১৬ জনের পরিবারকে মরদেহ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের তথ্য নেই এই দুই সংস্থার কাছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাকি পরিবারগুলোও তথ্য-প্রমাণ নিয়ে আবেদন করলে তাদেরও টাকা দেওয়া হবে।
যে ১৬ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তারা হলেন— শাহাদাৎ হোসেন (মুন্সিগঞ্জ), তাহের ব্যাপারী (মুন্সিগঞ্জ), সুমন তালুকদার (মুন্সিগঞ্জ), ময়না বেগম (মুন্সিগঞ্জ), মুক্তা আক্তার (মুন্সিগঞ্জ), আফজাল ও বাচ্চু শেখ ( মুন্সিগঞ্জ), মনিরুজ্জামান (মুন্সিগঞ্জ), গোলাপ হোসেন (মুন্সিগঞ্জ), সুবর্ণা আক্তার (মুন্সিগঞ্জ), তামিম (মুন্সিগঞ্জ), আবু সাঈদ (মুন্সিগঞ্জ), সুফিয়া বেগম (মুন্সিগঞ্জ), শহিদুল ইসলাম (মুন্সিগঞ্জ),মিজানুর রহমান (মুন্সিগঞ্জ), সত্ত রঞ্জন মালিক (মুন্সিগঞ্জ) ও মো. পাপ্পু (মুন্সিগঞ্জ)।
আরও পড়ুন- হৃদি ভেসে যায় বুড়িগঙ্গার জলে [ফটো]
মৃতদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে মৃতদের দাফনে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। আর জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার টাকা করেও পেয়েছে পরিবারগুলো।
জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ঢাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, সব পরিবারকে মৃতদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যারা টাকা পাননি, তারা আবেদন করলে তাদের টাকাও বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- ‘আল্লাহ বাঁচিয়েছে, ১ মিনিটের জন্য লঞ্চটি ধরতে পারিনি’
সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় মুন্সিগঞ্জের আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। লঞ্চডুবিতে মারা গেছেন তার চাচা ও ফুফাত ভাই। আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, আমার ফুফাত ভাই ও চাচা মারা গেছেন। তারা ফলের ব্যবসা করতেন। মাল কিনতে ঢাকা গিয়েছিলেন। ফেরত এলো তাদের লাশ। দুইটি মৃতদেহ দাফনের জন্য আমাদের ৩০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবারগুলোর কী হবে? তারাই ছিলেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পরিবারগুলো কিভাবে চলবে এখন? সরকারের কাছে আবেদন করব, এই পরিবারগুলোকে যেন সাহায্য করা হয়।
লঞ্চডুবিতে প্রাণ হারানো আবু সাঈদের স্ত্রী নূর জাহানের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। স্বামীকে হারানোর শোকে মূহ্যমান নূর জাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার যে ভাই আর কিছুই রইল না। সব যে শেষ হয়ে গেল। সরকার ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে, এই টাকা দিয়ে আমি কী করব? আমার সম্বলটাই তো চলে গেল। আমার বাচ্চাগুলোর কেউ তো আর দেখার রইল না!’
আরও পড়ুন- ফিরে গেছে প্রত্যয়, ম্যানুয়ালি টেনে তোলা হবে মর্নিং বার্ডকে
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় মৃত পরিবারগুলোকে অব্শ্য আরও দেড় লাখ টাকা করে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এটা যদি পরিকল্পিত হয় এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে, উদ্ধার তৎপরতার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সারাবাংলাকে বলেন, অতীতের যেকোনো দুর্ঘটনার তুলনায় অনেক অল্প সময়ের মধ্যে আমরা মরদেহগুলো উদ্ধার করতে পেরেছি। তবে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় আমাদের উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় দুর্ঘটনাস্থলে আসতেই পারেনি। আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- লঞ্চডুবির ঘটনা পরিকল্পিত হতে পারে: প্রতিমন্ত্রী
দুর্ঘটনা তদন্তে আলাদা কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ও। একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সকালে ঢাকা থেকে চাঁদপুরের পথে ছেড়ে যায় ময়ূর-২ লঞ্চ। মর্নিং বার্ড লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ ঘাট থেকে ঢাকায় আসছিল। শ্যামবাজারে ময়ূর-২ লঞ্চটি মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দিলে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় সাঁতরে কয়েকজন তীরে এসে পৌঁছান। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রী লঞ্চের মধ্যে আটকা পড়ায় তারা বের হতে পারেননি।
আরও পড়ুন-
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি, মরদেহের সংখ্যা বেড়ে ৩২
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: নৌপরিবহনের তদন্ত কমিটি
পোস্তগোলা ব্রিজে আটকা পড়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ
ক্ষতিপূরণ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি মর্নিং বার্ড লঞ্চ লঞ্চডুবি সদরঘাটে লঞ্চডুবি