সদরঘাটে লঞ্চডুবি: প্রতিবেদন সোমবার, ময়ূরের মালিক-চালক পলাতক
৫ জুলাই ২০২০ ০০:২২
ঢাকা: সদরঘাটে সম্প্রতি ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মর্নিং বার্ড ডুবির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার (৬ জুলাই) প্রকাশ করা হবে। তবে তদন্ত কমিটি ময়ূর-২-এর মাস্টার এবং ড্রাইভারের অদক্ষতা ও অবহেলার প্রমাণ পেলেও তারা এখনও পালিয়ে আছে। এমনকি ঘটনার পর থেকে পালিয়ে রয়েছে অভিযুক্ত লঞ্চের মালিকও।
বিআইডব্লিউটিএ গঠিত কমিটির এক সদস্য জানান, তারা ময়ূর-২ লঞ্চ মালিকের কোনো বক্তব্য পাননি। তবে তার প্রতিষ্ঠান সি হর্স করপোরেশনের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ময়ূর-২ লঞ্চ’র কেরানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি মর্নিং বার্ড লঞ্চের বেঁচে যাওয়া ১১ যাত্রীসহ প্রত্যক্ষদর্শী ২৫ জনের বক্তব্য নিয়েছে।
এর আগে ২৯ জুন দুর্ঘটনার পর পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন, দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে শনাক্ত এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দেওয়ার জন্য বলা হয়। সে অনুযায়ী ৬ জুলাই প্রকাশ করা হবে তদন্ত প্রতিবেদন।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, লঞ্চ দুঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের কাছে বলেছে যে, ময়ূর-২ লঞ্চটি হঠাৎ করেই মর্নিং বার্ড লঞ্চের দিকে চেপে আসছিল। প্রথমে পেছনে বেপরোয়াভাবে ধাক্কা দিলে লঞ্চের ভেতরে সবাই ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এর মাত্র ৬ সেকেন্ডের মাথায় আরেক ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়।
এদিকে মেসার্স সি হর্স করপোরেশনের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন তদন্ত কমিটির সদস্যদের জানিয়েছেন, লঞ্চের মাস্টার ও ড্রাইভারের অদক্ষতা এবং অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ময়ূর-২ লঞ্চের কেরানি সেলিম কমিটিকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে তিনি লঞ্চে ছিলেন না। এ কারণে দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, কে লঞ্চ চালিয়েছে তা তিনি জানেন না।
ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড লঞ্চের নিচের ডেকে ছিলেন যাত্রী আব্দুর রউফ। তিনি ২০ বছর ধরে সকাল বিকাল মুন্সিগঞ্জ–ঢাকা রুটে যাতায়ত করেন। তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে সাতটায় মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে ৫০/৬০ জন যাত্রী নিয়ে ছাড়ে মর্নিং বার্ড। লঞ্চে আমার এক বন্ধুসহ আমি ঢাকায় আসছিলাম। লঞ্চটি সদরঘাটের একেবার কাছে চলে আসার পর যাত্রীরা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে ঘাটের খালি একটি লঞ্চ আমাদের লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। ভয়ে আমরা সবাই চিৎকার দিই। এরপর পানিতে ডুবে গিয়ে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। এক পর্যায়ে আমি সাঁতরে উপরে উঠতে পারলেও বন্ধু সত্যরঞ্জন উঠতে পারেনি।’
২৯ জুন ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মর্নিং বার্ড ডুবির ঘটনায় এভাবেই ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। সেই লঞ্চ ডুবির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হতে যাচ্ছে সোমবার।
আরও পড়ুন-
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি, মরদেহ বেড়ে ৩২
লঞ্চডুবির ঘটনা পরিকল্পিত হতে পারে: প্রতিমন্ত্রী
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: নৌপরিবহনের তদন্ত কমিটি
‘আল্লাহ বাঁচিয়েছে, ১ মিনিটের জন্য লঞ্চটি ধরতে পারিনি’
ফিরে গেছে প্রত্যয়, ম্যানুয়ালি টেনে তোলা হবে মর্নিং বার্ডকে
পোস্তগোলা ব্রিজে আটকা পড়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ
তদন্ত প্রতিবেদন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ময়ূর-২ মর্নিং বার্ড লঞ্চ ডুবি