Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংগৃহীত নমুনা ফেলে রাখা হতো রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মকর্তার কক্ষে


৭ জুলাই ২০২০ ১২:১৭

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা না করে ফেলে রাখা হয়েছিল রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তারিক শিবলির রুমে। এই কক্ষেই পাওয়া যায় বাংলাদেশে অনুমোদন না পাওয়া র‍্যাপিড টেস্ট কিট, অব্যবহৃত নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রীসহ নানা রকমের ওষুধ।

সোমবার (৬ জুলাই) উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযানের শেষ ভাগে এমন তথ্য-প্রমাণ উঠে আসে। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।

বিজ্ঞাপন

অভিযানের শেষদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তারিক শিবলির কক্ষে যায় র‍্যাব। এ সময় সেখানে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অনুমোদন না পাওয়া র‍্যাপিড টেস্ট কিট পাওয়া যায়। তারিক শিবলির টেবিলের নিচের ড্রয়ারে পাওয়া যায় সংগৃহীত নমুনা যা ল্যাবে পাঠানো হয়নি। কক্ষের পাশে থাকা বারান্দায় পাওয়া যায় কার্টন, যেগুলো খোলার পরে দেখা যায় অব্যবহৃত পিপিই। এছাড়াও কক্ষটিতে থাকা একটি আলমারিতে পাওয়া যায় নানা রকমের নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রী। এ সময় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় বিভিন্ন ওষুধ থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রও পাওয়া যায়।

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এই তারিক শিবলিকেই রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেওয়া হতো প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। মূলত এই তারিক শিবলির রুম থেকেই নমুনা সংগ্রহ করার পরে তার রিপোর্ট বানানো হতো বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রাকিবুল ইসলাম সুমন। তিনি রিজেন্ট গ্রুপের কেসিএস প্রজেক্টের অ্যাডমিন অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এক মাসে আগে আমি যখন লকডাউন শেষে এখানে আসি তখন দেখি এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিপসমে মোটামুটি ১৫০ থেকে ২০০টির মতন নমুনা দেওয়া হতো। তারপরে কী কারণে জানি না দুই হাসপাতাল থেকে ৫০টা করে নমুনা দেওয়া হতো। কোনো কোনো সময় ২০টা বা ৩০টা নমুনা সংগ্রহ হলে তখন কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে হেড অফিস থেকে ৫০টা মিলিয়ে দেওয়া হতো। আস্তে আস্তে জানতে পারলাম যে এই বিল্ডিং থেকেই রিপোর্ট করে দেওয়া হয়, এগুলো নিপসমে বা কোথাও যায় না। রিপোর্ট কিভাবে দিতো তা আইটি ডিপার্টমেন্টের লোকেরাই ভালো জানবে।

নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কন্ট্রোল রুমে ফোন আসতো। তখন আমরা কাউকে মেসেজ দিয়ে দিতাম যে, এই নমুনাটা সংগ্রহ করতে হবে। প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল যে পাঁচটা করি আর ১০টা করি সংগ্রহ করা সকল নমুনা টেস্টের জন্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা প্রথম নমুনা পরীক্ষার জন্য তিন হাজার ৫০০ টাকা নিতাম। পরেরটার জন্য এক হাজার টাকা করে নিতাম।’

নিজেরাই নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে দিচ্ছেন দাবি করে রাকিবুল বলেন, ‘যখন ১০০টা নমুনা সংগ্রহ হয়ে যেতো তখন ৫০টা আমি নিপসমে দিয়ে আসতাম। বাকি ৫০টা কি করা হবে জানতে চাইলে আমাকে বলতো এখান থেকেই রিপোর্ট বানিয়ে দিয়ে দাও। রিপোর্টগুলো তরিক শিবলির রুম ও আরেকটি রুম থেকে বানানো হতো।’

তরিক শিবলির বিষয়ে রাকিবুল বলেন, ‘আমি যখন আসি তখন দেখি উনি কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পালন করছেন। পরে তার এই দায়িত্ব চেঞ্জ করে দীপায়ন বসুকে দেওয়া হয়। আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের খুব কাছের লোক ছিল তারিক শিবলি। সব কিছু সেই করেছে। সেই সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত। তরিক শিবলি ভাই তিনটা লোক নিয়োগ দিয়েছিল। কন্ট্রোল রুমে যখন তাদের ফোন আসতো তখন অবাক হতাম যে, রিজেন্টের এমপ্লয়িই না কিন্তু সে কেনো নমুনা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে।’

প্রতারণার শেষ নেই রিজেন্টের: রক্তের নমুনা নিয়ে ইসিজি পরীক্ষা!

চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার বিষয়ে রাকিবুল বলেন, ‘গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আমি হেড অফ অ্যাডমিন অফিসে যাই একটা ফাইল সই করার জন্য। সেখানে আমাকে বলে আজ থেকে তিন মাসের আগের তারিখে নাকি আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি বললাম আজও তো আমি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছি। তখন আমাকে বলে না এটা আসলে কোম্পানি পলিসির কারণে হয়তো করা হয়েছে। কালকে (৫ জুলাই) আবার শুনি যে আমাদের তিনজনের নামে জিডিও হয়েছে উত্তরা পশ্চিম থানায় কোম্পানির পক্ষ থেকে।’


‘এই খবর শুনে তো আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। কারণ আমি তো কোম্পানির বাইরের কোনো কাজ করি না বরং আমি নিয়মের ভেতর থেকেই কাজ করছি। কি বিষয়ে জিডি করেছে তাও আমি জানি না। আমার কাছে আমাকে বরখাস্ত করার কোনো চিঠিও এখনো আসে নাই। আমাদের বলছে চাকরি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এটা জাস্ট একটা ফরমালিটি মেইনটেইন করা হচ্ছে। সিচুয়েশন ঠিক হয়ে গেলে আবার আপনাদের যার যার মতো ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু আমি গত তিন মাস ধরে বেতন পাইনি’, বলেন এই কর্মকর্তা।

রাকিবুল আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার বড় বড় কর্মকর্তাদের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে নিয়ে আসতে বলতেন। সেই নমুনাগুলো পরীক্ষা হতো কিনা সেই বিষয়ে আমার জানা নেই।’

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখানে বিভিন্ন রকমের প্রতারণার জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ধারায় মামলা করবো। একটা আবাসিক এলাকার বাসায় গড়ে ওঠা এই হাসপাতালে আমরা অনেক কিছু পেয়েছি যা ইতোমধ্যে আপনাদের দেখিয়েছি। এখানে দেখেন নমুনা পরীক্ষা না করে ফেলে রেখেছে। অথচ এটা কিন্তু খুবই বিপদজনক।’


র‍্যাবের এই ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা নিয়ে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকলে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে নতুন কৌশল নেয় রিজেন্ট। যখন আমরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে এসব অভিযোগ পাচ্ছিলাম তখন রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ এটাকে গোপন করার জন্য গত পরশু একটা প্রেস কনফারেন্স করে। সেখানে তারা বলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসবের জন্য দায়ী না। রিজেন্ট হাসপাতালের ৩ জন কর্মী এর সঙ্গে জড়িত।’

অভিনব এই কৌশলের বিষয়ে সারোয়ার আলম বলেন, ‘নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে গতকাল (৫ জুলাই) এক মাস সাত দিন আগের ব্যাকডেট দিয়ে তিন কর্মচারীকে বরখাস্ত করে রিজেন্ট। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটা সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছে রিজেন্ট। অথচ আমরা দেখলাম ওই তিন কর্মী গত দেড়মাস অফিস করেছে, হাজিরা দিয়েছে। রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ ফ্লুইড দিয়ে তাদের হাজিরা খাতার স্বাক্ষরগুলো মুছে দিয়েছে, যাতে তারা প্রমাণ করতে পারে যে আগেই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, “শুধু তাই না, রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ এই তিন কর্মচারীদের বলেছে যে, ‘আপনারা চাকরি করেন কোনো সমস্যা নেই, আমরা আপনাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসব।’ তার মানে কর্তৃপক্ষ স্টাফদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করার চেষ্টা করেছে। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান নিজে করত।’

উল্লেখ্য, সোমবার বেলা ২টা থেকে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি দল প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এর আগে র‍্যাবের আরেকটি দল রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখায় অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে আট জনকে আটক করে বলেও জানিয়েছেন সারোয়ার আলম।

এর আগে, ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরে সরকারের সঙ্গে কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে রিজেন্ট হাসপাতাল। এরপর থেকে নানা রকম অভিযোগ আসছিল হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি ওভাল গ্রুপের জেকেজি হেলথকেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার নানা রকম প্রমাণ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন:
পরীক্ষা ছাড়াই করোনার রিপোর্ট দিত রিজেন্ট হাসপাতাল
কোভিড চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণা: রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের হানা
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়েই রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা! 

করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা রিজেন্ট হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর