জেকেজির ফেলে যাওয়া ৩ হাজার ৪৪৬ সেট পিপিই উদ্ধার
১৪ জুলাই ২০২০ ১৭:১৬
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামে ওভাল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) মধ্যে ৩ হাজার ৪৪৬ পিস উদ্ধার করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওভাল গ্রুপের কর্মকর্তারা গ্রেফতার হওয়ার পরে এই পিপিইগুলো তিতুমীর কলেজে ফেলে পালিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা পিপিই গুলো ফেরত আনেন বলে সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির স্টোর কর্মকর্তা জিনারুল ইসলাম।
জেকেজি’র ব্যবহৃত বিছানা-পিপিই ফেরত দেওয়ার নির্দেশ
তিনি বলেন, ‘এই পিপিইগুলো জেকেজিকে সিএমএসডি থেকে দেওয়া হয়েছিল। জেকেজির কর্মকর্তারা গ্রেফতার হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা এই পিপিইগুলো ফেলে পালিয়ে যায়৷ এরপরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার নির্দেশে এগুলো ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা ৩ হাজার ৪৪৬ সেট পিপিই উদ্ধার করেছি। এছাড়া স্যাম্পল কালেশকন বক্স ৯টি, স্প্রে বোতল ১১টি, স্যালাইন চারটি, মাল্টি প্লাগ দুটি, সফট স্ট্রিপ ৩ হাজার ৬০০টি, সু কাভার ৪৫০টি, হেড ক্যাপ ৯০০টি, বায়োহ্যাজার্ড ব্যাগ ৪০০টি, ইলেকট্রিক ক্যাটলি একটি ও চশমা ৫০টি উদ্ধার করা হয়েছে।’
এর আগে, ১ জুলাই নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষার জন্য ওভাল গ্রুপের জেকেজি হেলথকেয়ারকে নমুনা সংগ্রহের জন্য সরবরাহ করা বিছানাপত্র ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) হস্তান্তর করার জন্য তিতুমীর কলেজকে অনুরোধ জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জেকেজি হেলথকেয়ার নামক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে সন্দেহজন কোভিড-১৯ রোগী থেকে নমুনা সংগ্রহ করছিল। ওই কাজের জন্য জেকেজি আপনার প্রতিষ্ঠানকে নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান হিসেবে ব্যবহার করছিল। কিছু কিছু অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ জুন ২০২০ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর জেকেজির সঙ্গে নমুনা সংগ্রহসহ সকল সমঝোতা চুক্তি বাতিল করেছে।
তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর দেওয়া চিঠিতে আরও বলা হয়, এমতাবস্থায় আপনার প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত নমুনা সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত বিছানাপত্র (বেড) ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীসমূহ (পিপিই) অতিসত্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করা হলো। এতে মহাপরিচালকের সম্মতি আছে।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ২৩ জুন তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেছে। আমি এ বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মহোদয়কেও জানিয়েছি। এছাড়া আমাদের সচিব মহোদয় এবং ডিজি মহোদয়কে জানিয়েছি। আমি স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে আমার কলেজ ক্যাম্পাসে কী কী আছে তা দেখিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমার কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ধরনের কাজ হচ্ছে। এমন অবস্থায় আসলে জেকেজি হেলথকেয়ারের কর্মীদের ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিস আমার এখানে এখনও আছে। সেগুলো তো আর কলেজ প্রশাসন নিরাপত্তা দিয়ে রাখতে পারবে না বেশিদিন। তাই আমি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করি। এর পরে তারা এই নির্দেশনা দেয়। আজ (২ জুলাই) কিছু জিনিস নিয়ে গেছে। বাকিগুলোও ধীরে ধীরে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।’
এর আগে গত ১৬ জুন সারাবাংলা.নেটে ‘করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে তাদের নানা রকমের প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানের আরও আর্থিক দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের কাছে।
২৩ জুন প্রতিষ্ঠানটির পাঁচজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২৪ জুন নমুনা পরীক্ষার জন্য জেকেজি হেলথকেয়ারকে দেওয়া নমুনা সংগ্রহ, বুথ স্থাপন ও প্রশিক্ষণের সব অনুমতি বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
১২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির ‘চেয়ারম্যান’ বলে পরিচিত ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন
করোনার ভুয়া রিপোর্ট: জেকেজির আরিফুলসহ ৪ জন কারাগারে
রিমান্ডে থেকেও ‘ইয়াবা চাইছেন’ জেকেজি’র আরিফুল
সরকারি চাকরি করেও ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি’র চেয়ারম্যান
গ্রেফতারের সংবাদ শুনে তিতুমীর কলেজ থেকে পালালো জেকেজি’র কর্মীরা
চিকিৎসকরা পেত না পিপিই, জেকেজির জন্য ‘আনলিমিটেড’
সরকারি খরচে বেসরকারি ‘প্রতারণা’ জেকেজি হেলথ কেয়ারের
অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ধমক দিয়ে কাজ করাত জেকেজি হেলথকেয়ার