দুই বছর পর অনুমোদন, চবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
২৫ জুলাই ২০২০ ১৮:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আদালতে আরজি জমা দেওয়ার দুই বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয়েছে। চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হত্যা মামলার আসামি হয়ে জেল খেটে আলোচনায় এসেছিলেন।
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত থেকে পাঠানো রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ সম্পর্কিত নথি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া।
ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রেকর্ডের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বাানুমতির প্রয়োজন হয়। গত সপ্তাহে আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রেকর্ডের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাই। এরপর সেটি নিয়মিত মামলার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত শেষে আমরা সরাসরি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারব।’
দুই বছরেরও বেশি সময় আগে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ১৭ মে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান তানভীর বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো. নোমানের আদালতে দণ্ডবিধির ১২৩ (ক), ১২৪ (ক), ১৭৭, ৫০০, ৫০১ ও ৫০২ ধারায় মামলার আরজি জমা দিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ যুক্ত থাকায় আদালত মামলার আরজি গ্রহণ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী সরকারের অনুমতি নিয়ে এই মামলার এজাহার গ্রহণের জন্য পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল জার্নাল অব হিউম্যান সোশ্যাল সাইয়েন্স: সোসিওলজি এন্ড কালচার নামে এক জার্নালে ‘রিলিজিয়াস পলিটিক্স অ্যান্ড কমিউনাল হারমনি ইন বাংলাদেশ: এ রিসেন্ট ইমপাস’ শিরোনামে আনোয়ার হোসেনের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল আনোয়ার হোসেন বিভাগীয় সভাপতি বরাবরে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করেন। এতে তিনি ওই প্রবন্ধ সংযুক্ত করেন। এরপর ওই প্রবন্ধে প্রকাশিত বিভিন্ন ‘বিতর্কিত’ বিষয় নিয়ে দৈনিক ভোরের কাগজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দায়ের করা মামলায় বাদি অভিযোগ করেন, প্রকাশিত প্রবন্ধে একাধিকবার শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হলেও একবারও তিনি জাতির জনক কিংবা বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করেননি। এতে জাতির জনকের প্রতি আনোয়ার হোসেনের তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেয়েছে।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রবন্ধে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হিজাব পরিধান, হাটহাজারীর নন্দীরহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে ও উপাসনালয়ে হামলা, রামু বৌদ্ধবিহারে সহিংসতা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার চেষ্টার করার অভিযোগও আনা হয় আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
এর আগে, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে তার প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তখন ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।
বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন এবং কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন এবং লাশের পুনঃময়নাতদন্তের আবেদন জানান। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর কবর থেকে লাশ তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়। পুনঃময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার মৃত্যুকে শ্বাসরোধজনিত হত্যা বলে উল্লেখ করা হয়।
দিয়াজ হত্যা মামলার আসামি আনোয়ার ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। জেল থেকে বের হয়ে আনোয়ার আবারও শিক্ষকতায় ফেরেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
আনোয়ার হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চবি রাষ্ট্রদ্রোহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়