Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব বাস্তবায়নে যৌক্তিক সময়সীমা চায় আ.লীগ


৩০ জুলাই ২০২০ ০০:৫২

ঢাকা: রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার সময়সীমা তুলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের এমন প্রস্তাবনায় ভিন্নমত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির বক্তব্য, রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্বের বিষয়টি আরও কার্যকর করা প্রয়োজন। এর জন্য ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের বিধানটি কার্যকর করতে এবং সব দলের এটি মেনে চলার সুযোগ করে দিতে একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। সে উপায় বের করার প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে দলটি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এই সময়সীমা ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৯ জুলাই) দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অফিসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০১৯ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের খসড়া আইনে দলের মতামত জমা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এদিন নির্বাচন কমিশনে যান দলের পক্ষ থেকে।

বিজ্ঞাপন

ইসি সচিবের কার্যালয় থেকে বের হয়ে আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, এই বিষয়ে (রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের খসড়া) আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। এটা আইনি বিষয়। ইসি আমাদের কাছে মতামত চেয়েছে, আমরা মতামত দিয়ে গেলাম। এ ক্ষেত্রে দলের বক্তব্য লিখিত দেওয়া আছে। এর বাইরে কোনো বক্তব্য নেই। আমরা মতামত দিয়েছি, রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশও করতে পারি। সময় পেলে সেটাও করা যাবে।

আরও পড়ুন-

আবদুস সোবহান গোলাপের সঙ্গে থাকা ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ নিয়ে ভেবেছে, একটি খসড়া তৈরি করেছে। সেই খসড়া নিয়ে তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছে। আমরা জেনেছি, ৪২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৮টি রাজনৈতিক দল তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে। আমরা আমাদের প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেখানে আমাদের বক্তব্য বিস্তারিত তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে আমাদের দলের বক্তব্য এখনই গণমাধ্যমে জানাতে চাই না। তবে নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যে দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে, সেটি আমরা সেখানে উল্লেখ করেছি।

নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ কী মতামত দিয়েছে— আওয়ামী লীগের মতামত জমা হওয়ার পর এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) ২০২৫ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বিধান প্রস্তাবিত নতুন আইনে রাখার জন্য মতামত দিয়েছে।

আইনের খসড় বিভিন্ন দলের মতামত সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘মতামতগুলো মিশ্র। কেউ বলেছে উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রে  আলাদা আলাদা সময় বেঁধে দেওয়ার জন্য। কেউ বলেছে নারী সদস্য পদ পূরণে সময় আর না বাড়াতে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়েও তারা মতামত দিয়েছেন। আমরা এগুলো একীভূত করছি। তারপর কমিশনের কাছে দেওয়া হবে। ৩১ জুলাই মতামত দেওয়ার সময় শেষ। আর  সময় বাড়ানো হবে না। এরপরই যৌক্তিক মতামতের ভিত্তিতে নতুন দল নিবন্ধন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

এর আগে, ২০০৮ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত আরপিও‘তে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে।’ আরপিও সংশোধনের ১১ বছর পার হলেও কোনো রাজনৈতিক দল ইসির বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এ অবস্থায় ইসি আরপিওটি সংশোধন করে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। আর সেই আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সময়সীমা তুলে দিয়েছে। ইসি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত দল, ১০টি অনিবন্ধিত দল ও ১০ জন ব্যক্তি এই আইনের খসড়ায় মতামত দিয়েছেন।

ইসির প্রস্তাবিত খসড়ায় নারী নেতৃত্ব ছাড়াও খসড়ায় নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে আবেদন করার তারিখ থেকে আগের দুই সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসন পাওয়ার বিষয়টিও রাখা হয়েছে। ওই সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পাওয়ার বিধানেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও পরপর দুই বছর সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিলসহ প্রস্তাবিত আইনে একগুচ্ছ শর্ত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের বিভিন্ন পর্যায়ে শতকরা যে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের বিধানটি ছিল, এটি কেবল আওয়ামী লীগই অনেকটা প্রতিপালন করেছে। আমাদের শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, বিভিন্ন স্তরেই শতকরা ২২ শতাংশের বেশি নারী নেতৃত্ব রয়েছে। এর বাইরে কেবল নারীদের জন্যই আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে (মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ)। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যাও ব্যক্তিগতভাবে ও সাংগঠনিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন চান। এ কারণে আমরা বলেছি, আমরা যেটি প্রতিপালন করেছি, সেটি অনেক দল সেটি পারেনি। তারাও যেন এই বিধান প্রতিপালন করতে পারে, আমরা সেজন্য একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য বলেছি।

বিপ্লব বড়ুয়া আরও বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের বিষয়ে বলেছি, সুস্পষ্ট বিধান থাকতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নে দলগুলোতে ৩৩ ভাগ নেতৃত্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় ছিল। অনেক দলই তা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ অনেকটাই করেছে। তাই আমরা বলেছি, এই বিধানটি শিথিল করা যেতে পারে, তবে নতুন ও বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমরা এই ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছি।

আওয়ামী লীগের এই দফতর সম্পাদক আরও বলেন, আরপিও মূল আইন ইংরেজিতে। এটি নির্বাচন কমিশন বাংলায় অনুবাদ করার কথা বলেছে। আমরা সেটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক একটি কাজ হিসেবে আমাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছি।

 

৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ ইসি সচিব মো. আলমগীর ড. আবদুস সোবহান গোলাপ নারী নেতৃত্ব নির্বাচন কমিশন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্ব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর