সিনহা হত্যা মামলা: ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত কারাগারে
৬ আগস্ট ২০২০ ১৮:৪২ | আপডেট: ৬ আগস্ট ২০২০ ২৩:০০
কক্সবাজার: সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি ৮ পুলিশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের মধ্যে মামলার ১ ও ২ নম্বর আসামি যথাক্রমে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আট আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। সে আবেদন নামঞ্জুর করে বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) হেফাজতে বিকেল ৫টার দিকে ওসি প্রদীপকে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এর আগেই লিয়াকতসহ বাকি আসামিদের নিয়ে আসা হয় আদালতে। তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছিল। পরে ওসি প্রদীপকে নিয়ে সিএমপি’র একটি দল উপস্থিত হলে তাদের এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে র্যাব তাদের আদালতে হাজির করে।
আরও পড়ুন-
‘সিনহা নিহতের ঘটনা বিচ্ছিন্ন, যৌথ তদন্ত চলছে
লিয়াকতসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে সিনহার বোনের মামলা
মেজর সিনহা নিহতের ঘটনায় টেকনাফের ওসি প্রত্যাহার
সিএমপির হেফাজতে ওসি প্রদীপ, নেওয়া হচ্ছে কক্সবাজার আদালতে
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপি কার্যালয় থেকে প্রদীপ কুমার দাশকে নিয়ে সিএমপির তিনটি গাড়ির বহর কক্সবাজারের দিকে রওনা দেয়।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রদীপ কুমার দাশ দামপাড়ায় বিভাগীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। সেখান থেকে আমরা তাকে নিজেদের হেফাজতে নিই। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তিনি কক্সবাজার আদালত আত্মসমর্পণ করবেন। যেহেতু তার নিরাপত্তার একটি বিষয় আছে, সেজন্য আমরা তাকে বিশেষ নিরাপত্তা সহকারে কক্সবাজারে পাঠাচ্ছি। সিএমপি তাকে আটক বা গ্রেফতার করেনি।’

কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছিল কঠোর নিরাপত্তা
৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় বুধবার (৫ আগস্ট) কক্সবাজার জুডিশিয়াল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা একটি তথ্যচিত্র ধারণের কাজ করছিলেন। ৩১ জুলাই রাতে ওই দিনের শুটিং শেষ হলে তিনি টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ফিরছিলেন। শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে তার গাড়ির গতিরোধ করা হলে তিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিলেও পুলিশ তাকে লাঞ্ছিত করে এবং একপর্যায়ে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাকে গুলি করলে তার মৃত্যু হয়।

গাড়ি থেকে নামিয়েই ওসি প্রদীপকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে
মামলার ১ নম্বর আসামি মামলায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত, ২ নম্বর আসামি ওসি প্রদীপ। আরও সাত পুলিশকে মামলায় আসামি করা হয়। এর মধ্যে বুধবার রাতে ওসি প্রদীপ কুমারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতর। পরিদর্শক লিয়াকতসহ ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয় আরও আগেই। আজ আত্মসমর্পণ করা আট আসামিকে কারাগারে পাঠানো হলো।
পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনায় বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজার পরিদর্শন করেন। তারা সেখানকার সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে সেনাপ্রধান ও আইজিপি এক যৌথ ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।

আদালত প্রাঙ্গণে এদিন ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়
যৌথ ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন বলে মনে করছে দুই বাহিনী। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জয়েন্ট এনকোয়ারি টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তদন্তে এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে যাদের নাম বেরিয়ে আসবে, তাদের বিচার হবে জানিয়ে সেনাপ্রধান ও আইজিপি বলেন, ব্যক্তি অপরাধের দায় কোনো প্রতিষ্ঠানের বা বাহিনীর হবে না।
আরও পড়ুন-
লিয়াকতসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে সিনহার বোনের মামলা
পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজরের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি
মেজর সিনহার মাকে টেলিফোন, বিচারের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
৩ মাসের মধ্যে সিনহা হত্যার বিচার ও দোষীদের ফাঁসি চায় রাওয়া
উসকানিতে সেনা-পুলিশ সম্পর্ক নষ্ট হবে না: সেনাপ্রধান ও আইজিপি
পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহার মৃত্যু: আরও ‘শক্তিশালী’ তদন্ত কমিটি
কক্সবাজার আদালত কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টপ নিউজ মেজর সিনহা মেজর সিনহা মো. রাশেদ মেজর সিনহা হত্যা মামলা