চুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে চেক ডিজঅনার মামলায় সাজা: আপিল বিভাগ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৪৫
ঢাকা: চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে লেনদেনের কোনো বৈধ চুক্তিপত্র থাকলে তার শর্ত পূরণ হয়েছে কি না সেটা দেখেই চেক ডিজঅনার মামলার সাজা দিতে হবে মর্মে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
এ রায়ের ফলে এখন থেকে বাদীকেই প্রমাণ করতে হবে কী চুক্তিমূলে বা কোন বিবেচনায় চেকদাতা চেক ইস্যু করেছিল এবং সেই চুক্তিটি ব্যর্থ হয়নি, যার কারণেই বিবাদীর কাছে বাদীর পাওনা বলবৎ রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ থেকে প্রকাশ হয়েছে।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ মামলার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগে চেক ডিজঅনার হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চেকদাতার সাজা হতো। চেকমূলে চেকগ্রহীতার টাকা পাওয়ার কোনো কারণ আছে কি না, সেটি দেখার বাধ্যবাধকতা বা দিক নির্দেশনা ছিল না। এখন থেকে চেকগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে যে, চেকদাতা ও চেকগ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনো বৈধ চুক্তি ছিল কি না। সে চুক্তির শর্ত তিনি পূরণ করেছেন কি না। তাহলেই কেবল চেক ডিজঅনার মামলায় সাজা হবে।’
আপিল বিভাগের এ রায়ের ফলে চেকদাতারা তাদের নির্দোষ প্রমাণের একটা সুযোগ পেল। এছাড়া এ রায়ের ফলে চেক সংক্রান্ত মামলায় বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি ও হয়রানি কমবে বলেও মনে করেন তিনি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত এক আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন। যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার প্রয়াত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর ছোট ভাই, সাবেক কূটনীতিক কায়সার রশিদ চৌধুরীর স্ত্রী (মৃত) সামছি খানমের মালিকানাধীন নর্থ গুলশানস্থ ৩০ কাঠা জমি ১৯৭৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সম্পাদিত ইজারা চুক্তিমূলে আমেরিকান দূতাবাসকে ১১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। যেহেতু ওই ইজারা চুক্তিটি নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) করা হয়নি এবং বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সামছি খানমের উত্তরাধিকাররা (ইমরান রশিদ চৌধুরী, পারভেজ রশিদ চৌধুরী ও জিনাত রশিদ চৌধুরী) জমিটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
বিষয়টি জানতে পেরে আবুল কাহের শাহিন নামের এক ব্যক্তি ইমরান রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য তথা ১৫০ কোটি টাকায় কিনতে আগ্রহী ক্রেতা রয়েছে এবং তিনি তা বিক্রি করে দিতে পারবেন।
ইমরান রশিদ চৌধুরী ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ শাহিনের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। এই চুক্তির শর্তানুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বর্তমান বাজারমূল্যে জমিটি বিক্রি করে দেবেন এবং তার জন্য শাহিন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১৩ শতাংশ টাকা পাবেন। তখন ইমরান রশিদ চৌধুরী পোস্ট ডেইটেড ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার চারটি চেক আবুল কাহের শাহিনের নামে ইস্যু করেন। কিন্তু ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও শাহিন বর্তমান বাজার মূল্যে কোনো ক্রেতা যোগাড় করতে ব্যর্থ হন। ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৬ আগস্ট জমিটির ইজারা গ্রহীতা আমেরিকান দূতাবাসের সঙ্গে জমিটির মালিকরা একটি বায়না চুক্তি সম্পাদন করেন এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ৩ জুলাই বিক্রয় পূর্বক দলিল সম্পাদন করেন। এরপর শাহিনকে চেকগুলো ফেরত দিতে বলেন।
এদিকে আবুল কাহের শাহিন ওই পোস্ট ডেইটেড চেক চারটি ফেরত না দিয়ে নিজে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার ফন্দি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি চেক চারটি নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করেন। ইতোমধ্যে ইমরান রশিদ চৌধুরী শাহিনকে দেওয়া চেকগুলো সম্পর্কে ব্যাংকে ‘স্টপ পেমেন্ট ইন্সস্ট্রাকশন’ দিয়ে রাখলে সেগুলো যথারীতি ডিজঅনার হয়। তারপর শাহীন সিলেটের আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করে তার পক্ষে রায় পান।
ইমরান রশিদ চৌধুরী উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট রায় প্রদানের মাধ্যমে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেন।
এতে আবুল কাহের শাহিন উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে দীর্ঘ শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
আপিল বিভাগ গ্রহীতা চেক ডিজঅনার চেকদাতা প্রধান বিচারপতি মামলা