মাহফুজ আনাম তো মিথ্যা লেখেন নাই— নাসিম
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৩৪
ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও চারদলীয় জোট সরকারের আমল সম্পর্কে ইংরেজি দৈনিক, ‘দ্য ডেইলি স্টার’ সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার ‘After 30 years of autocracys demise, democracy still remains a distant dream’ প্রবন্ধে ‘মিথ্যা লেখেন নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি ‘পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা’ কামরুল হাসান নাসিম।
শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রায় ৩২ মিনিটের এই ভার্চুয়াল বক্তব্যে বাংলাদেশের বর্তমান ও অতীত রাজনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এই সাংবাদিক, কবি, লেখক, রাজনীতি ভাষ্যকার, নির্মাতা ও দার্শনিক।
এর আগে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও মাহফুজ আনামের ওই নিবন্ধের প্রতিক্রিয়া জানান। ‘দ্য ডেইলি স্টার’ সম্পাদক মাহফুজ আনাম আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন- মাহফুজ আনাম আওয়ামী নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন: রিজভী
পরে রাতে লাইভে এসে কামরুল হাসান নাসিম বলেন, ‘দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক মাহফুজ আনাম তার একটি নিবন্ধে যেটা বলেছেন, সেই বিষয়টি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ সামনে নিয়ে আসছেন। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো লেখা বা মতামত চলে গেলে সেটির প্রতিবাদ হতে পারে। জাতীয়তাবাদী দলের একজন কর্মী হিসেবে এ বিষয়টি একদিকে ভালো লেগেছে, আবার খারাপও লগেছে।’
‘কারণ হচ্ছে— ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি যখন টানা ৯২ দিন হরতাল-অবরোধ হচ্ছে, খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে রয়েছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে পতনের স্বপ্ন দেখছেন, ধারার বিপরীতে গিয়ে আমি তখন আবির্ভূত হয়ে বলছি, বিএনপির শীর্ষ নেতারাই অবহেলিত, আমাদের দলের মধ্যে কোনো গণতন্ত্র নেই। আমাদের পাঁচটা অসুখ আছে। আমরা আগে আমাদের দলটাকে ঠিক করি। এতে করে বিএনপির ৯৫ ভাগ কর্মী-সমর্থক আমার ওপর ক্ষেপে গেল,’— বলেন কামরুল হাসান নাসিম।
তিনি বলেন, ‘আমার ওই উদ্যোগ কেবল রাজনৈতিক পরিক্রমার জায়গা থেকে ছিল না। আধ্যাত্মিকতার জায়গা থেকেও যদি চিন্তা করা যায়, তাহলে বিএনপির অবস্থা আজ এই জায়গাটায় কেন গেল? আমি যে পাঁচটি রোগের কথা বলেছিলাম, সেই রোগ সারাবার জন্য বিএনপির পুনর্গঠন কেউ করতে গেল না। যদি বিএনপির পুনর্গঠন করা যেত তাহলে আজকের মাহফুজ আনাম, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ফরহাদ মজহার, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে নিয়ে দলটাকে সাজাতাম।’
রিজভীর উদ্দেশে নাসিম বলেন, ‘মাহফুজ আনামের বাবার কথা আপনি বলেছেন। মাহফুজ আনামের বাবা ১৯৭৯ সালে বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন। সে বছর তিনি স্বাধীনতা পদকও পেয়েছিলেন। এর আগে পান নাই। এই স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক কারা কখন বুদ্ধিজীবীদের দেয়, সেটা আমরা ভালো করে জানি। সেই মূল্যায়নের জায়গায় যদি আমরা থাকতে পারতাম, তাহলে মাহফুজ আনামকে আমরা জাতীয়তাবাদী দলে নিয়ে আসতে পারতাম।’
তিনি বলেন, ‘এই যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। আর তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে পড়েছে দুইটি সংবাদ মাধ্যম। কেন হয়েছে? তাদের মেধা আছে বলেই হয়েছে। তারা জাতির বিবেক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে বলেই তৃতীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হতে পেরেছে। মাহফুজ আনামকে জাতীয়তাবাদী বলয়ে আনতে পারিনি, তার হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা।’
নাসিম বলেন, ‘আমাদের একটা জাতীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে, তাদের তো দেখছি না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন বসে আছেন। দেশে আসতে ভয় পান। ওখানে বসে অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নাশকতা করে মানুষ খুন করে ক্ষমতায় আসতে হবে! কেন শাহ এ এস এম কিবরিয়াকে হত্যা করতে হবে? আহসান উল্লাহ মাস্টারকে মারতে হবে? ১৫ আগস্ট করতে হবে? ২১ আগস্ট করতে হবে কেন? এটা (বিএনপি) জাতীয়তাবাদী দল। এটা কারও পারিবারিক সম্পত্তি না।‘
তিনি বলেন, ‘১৯৭৮ সালে জিয়ার রহমান ও মশিউর রহমানের চুক্তির মাধ্যমে এ দলটি জনগণের জন্য গঠন করা হয়েছিল। সেটি কেন একটি পরিবার দল হিসেবে টিকে থাকবে? চেয়ারপারসন ছয় মাস করে এক্সটেনশ নেবেন— নিশ্চয়ই এই এক্সটেনশনের জন্য সরকারের কাছে মুচলেকা দিতে হয়েছে। অথচ যাদের নিয়ে আমরা দলটাকে পুনর্গঠন করতে পারতাম, তাদের সঙ্গে ঝগড়া করছি। মাহফুজ আনাম কি খারাপ লিখেছেন? মাহফুজ আনাম তো মিথ্যে লেখেন নাই। মাহফুজ আনাম এই জায়গায় গেলেন কেন? তিনি ক্ষোভের জায়গা থেকে লিখেছেন। বিকজ, তোমরা (বিএনপি) তো ট্রেন মিস করেছ।’
একুশে আগস্ট কামরুল হাসান নাসিম গ্রেনেড হামলা চারদলীয় জোট ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম মাহফুজ আনামের প্রবন্ধ রুহুল কবির রিজভী