রেমিট্যান্সে প্রতি মাসেই নতুন রেকর্ড!
২ অক্টোবর ২০২০ ১০:৫৮
ঢাকা: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রতি মাসে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসেও দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তা আগস্ট মাসের রেকর্ড ভেঙেছে। এই মাসে দেশে আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ রেমিট্যান্স বেশি আসায় সেপ্টেম্বর এখন একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরিত মাস।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আর গত আগস্ট মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের চেয়ে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৪৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি এবং আগস্ট মাসের চেয়ে ১৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
এদিকে, এর আগে, গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন দেশে। একমাসে এত বেশি রেমিট্যান্স আর কখনো পাঠাননি প্রবাসীরা। এরপর গত আগস্টের ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স ছিল একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরিত মাস। সেপ্টেম্বর সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
আরও পড়ুন-
-
-
- আগস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স
- টানা তৃতীয় মাসে রেমিট্যান্স-রিজার্ভে নতুন রেকর্ড
- বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছ
- জুলাই ও আগস্টে ৫০ ভাগ রেমিট্যান্স বেড়েছে: অর্থমন্ত্রী
- রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা
- রেকর্ড রেমিট্যান্সে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় রিজার্ভ
- রেমিট্যান্স-রিজার্ভে নতুন রেকর্ডেও স্বস্তি পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা
- ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভে নতুন রেকর্ড, এবার ছাড়াল ৩৫ বিলিয়ন
-
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। বিশেষ করে রেমিট্যান্সের ওপর সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা এবং হুন্ডি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যান্ত পাঁচ মাসেই রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে পুরেনো রেকর্ড ভেঙে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে শীর্ষ প্রথম পাঁচটি স্থানই দখল করে রেখেছে সর্বশেষ পাঁচ মাস। চলতি বছরের মে মাসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রবাসীরা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এরপর জুন মাসে সেই রেকর্ড ভেঙে রেমিট্যান্স আসে ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এই রেকর্ডও একমাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। জুলাই মাসে প্রবাসীরা ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এ যাবৎকালে একমাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
এদিকে আগস্ট মাসে ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। এটি জুলাই মাসের তুলনায় কিছুটা কম হলেও গত মে ও জুন মাসের তুলনায় বেশি ছিল। ফলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে গত আগস্ট মাস ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেই স্থানটি দখল করে নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর— এই পাঁচ মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠানোর কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস শেষে (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমকি ৪৬ বিলিয়ন ডলার।এ নিয়ে গত চার মাসে সাত বার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় উন্নীত হলো।
গত ৪ জুন প্রথমবারের ৩৪ বিলিয়ন, গত ২৪ জুন ৩৫ বিলিয়ন ডলার, ৩০ জুন ৩৬ বিলিয়ন, ২৮ জুলাই ৩৭ বিলিয়ন, ১৮ আগস্ট ৩৮ বিলিয়ন ও ১ সেপ্টেম্বর ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমা ছাড়ায় রিজার্ভ। ১ অক্টোবর তা ৩৯ দশমিক ৪৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটিই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
বছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
অন্যদিকে পঞ্জিকা বছরের হিসাবে, ২০১৯ সালে রেকর্ড ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। এছাড়া ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার ও ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো— সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।
প্রবাসী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশ ব্যাংক রেকর্ড রেমিট্যান্স রেমিট্যান্সে রেকর্ড