Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজধানীজুড়ে এগিয়ে চলেছে ৩ মেট্রোরেলের কাজ


২২ অক্টোবর ২০২০ ০৯:৫৭

ঢাকা: এগিয়ে চলেছে রাজধানী জুড়ে তিনটি মেট্রোলের তৈরির কাজ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুমাসে (জুলাই-আগস্ট) মেট্রোলের প্রকল্প তিনটিতে ব্যয় হয়েছে ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। এ তিনটি মেট্রোরেল তৈরিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজারের ৭৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

প্রকল্পগুলোর শুরু থেকে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। ফাস্ট্রট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে। প্রতিবেদনটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

বিজ্ঞাপন

‘২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি মেট্রোরেল রুট নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের’

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজধানীর যানজট কমাতে মেট্রোরেল নির্মাণ খুবই ফলদায়ক হবে। কিন্তু প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করা, রেল পরিচালনার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা এবং পরিচালনার জন্য দক্ষজনবলের অভাব। তাছাড়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি যাতে না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।‘

এসব প্রকল্পের বিষয়ে এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফাস্টট্রাকভুক্ত প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে আমরা ব্যাপক মনিটরিং করছি। করোনার কারণে বাস্তবায়ন বাঁধাগ্রস্ত হলেও এখন সেই অবস্থায় আর নেই। আবারও গতি নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থায়নের কোনো সমস্যা নেই।’

বিজ্ঞাপন

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রতিদিন যানজটের কারণে শতশত কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেক শহরে বাস করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে নগরাঞ্চলে বসবাসকারীদের ৬০ শতাংশই বাস করে চারটি বড় মহানগরে। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী। এর মধ্যে ঢাকা বর্তমানে মারাত্মক বায়ু দূষণের শিকার। এছাড়া জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা তো আছেই। রাজধানীর অসহনীয় যানজট কমাতে মেট্রোরেলের বিকল্প নেই। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সে হিসেবে এসব রুট হয়ে গেলে কম সময়ে বেশি মানুষ একসঙ্গে পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে যানজট আর থাকবে না।‘

মেট্রোরেল-লাইন-৬: ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৬ (মেট্রোরেল) এর কাজ। এটি ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্ততবায়িত হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ থেকে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এ প্রকল্পটির অনুকুলে বরাদ্দ রয়েছে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গত জুলাই এবং আগস্ট দুই মাসে খরচ হয়েছে ২৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। একল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে এ মেট্রোরেল প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, ডিপো এলাকার শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া পূর্ত কাজ হয়েছে সাড়ে ৭১ শতাংশ। উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন নির্মাণ কাজের ৭৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সাতটি স্টেশনের কাজ ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্মাণ কাজ হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমের কাজ হয়েছে ৪৪ শতাংশ। রেল কোচ ও ডিপো ইক্যুপমেন্ট এসেছে ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ বর্ধিত করার উদ্যোগটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নতুন এ অংশের দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার।

মেট্রোরেল লাইন-১: বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে এমআরটি লাইন-১ রুটটি। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং জাইকার ঋণ থেকে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ২০১৯ সালের সেপ্টম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার এই রুটে ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার তৈরি হবে মাটির নিচে এবং বাকি ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড। এর স্টেশনগুলোর মধ্যে ১২টি থাকবে মাটির নিচে এবং সাতটি থাকবে এলিভেটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৫৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাছাড়া শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ। ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

মেট্রোরেল লাইন-৫: হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর-১, মিরপুর-১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-২-নতুনবাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে এমআরটি লাইন-৫। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১২ হাজার ১২১ কোটি এবং জাইকার ঋণ থেকে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এর আওতায় নর্দার্ন রুটের জন্য ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল তৈরি হবে। তার মধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল এবং সাড়ে ছয় কিলোমিটার হবে এলিভেটেড। এ রুটে ১৪টি স্টেশনের মধ্যে নয়টি মাটির নিচে আর পাঁচটি হবে এলিভেটেড। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে গত দুই মাসে খরচ হয়েছে ৫২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। তবে শুরু থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৭২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। ফাস্ট ট্র্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি একটি নতুন প্রকল্প। গত ২১ জুন প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যেইনোটিস অব কমেন্সমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।

মেট্রারেলের আরও দুই ছোট প্রকল্প: ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেট্রোরের লাইন-৫ এর আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে সাউদার্ন রুট শীর্ষক প্রকল্পটি। এটি ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এ অংশটি তৈরিতে মোট ব্যয় হচ্ছে ৪০৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১০০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ০৬২ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এটি একটি নতুন প্রকল্প কন্সালটেন্সী সার্ভিস ফর বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন এর কাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া মেট্রোরেল লাইন-১ এর আওতায় নির্মাণ হচ্ছে আরও একটি মেট্রোরেল। এটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৬০৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২১০ কোটি টাকা। দুই মাসে ব্যয় হয়েছে ৮২লাখ টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফাস্ট্রট্র্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের বেসিক ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ডিটেইল্ড ডিজাইন আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে শেষ হবে। কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পার্শ্বে ১০০ফিট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় এবং কমলাপুর রেলস্টেশন নির্মাণে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ চলছে।

সারাবাংলা/জেজে/এমআই

বরাদ্দ মেট্রোরেল রাজধানী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর