Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অকেজো’ সাড়ে ৬ কোটি টাকার ফগলাইট, কুয়াশায় বিপর্যস্ত ফেরি চলাচল


১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:১২

মানিকগঞ্জ: পৌষ আসার আগেই বেড়েছে শীত, সঙ্গে পড়ছে ঘন কুয়াশা। গত চার দিনে কুয়াশার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। রাত ১০টার পর থেকে পুরো নৌ পথে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। এরপর কখনও রাতে ১১টা আবার কখনো রাত ১২টায় বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কুয়াশা আর শীতের সঙ্গে লড়াই করতে হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমা লের প্রায় ২১টি জেলার মানুষের। অথচ কুয়াশার সঙ্গে টেক্কা দিতে এই নৌ রুটে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১০টি ফেরিতে ফগলাইট স্থাপন করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। তবে ফগলাইট নিয়ে ঘাট কর্তৃপক্ষ কোনো কথা বলতে নারাজ।

বিজ্ঞাপন

বিআইডাব্লিউটিসি আরিচা সেক্টরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কুয়াশার সঙ্গে টেক্কা দিতে কার্যত ২০১৪ সালে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটের ১০টি ফেরিতে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছে ফগলাইট। তবে যেসব ফেরিতে ফগলাইট স্থাপন করা হয়েছে তার একটিও ঘন কুয়াশাকে টেক্কা দিয়ে এক মিটার পথ অতিক্রম করতে পারছে না। ফলে ঘন কুয়াশা পড়লেই বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। মাঝখান থেকে ফগলাইট কিনতে সাড়ে ৬ কোটি টাকা পদ্মার পানিতে ফেলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ফেরির মাস্টাররা জানিয়েছেন, ফেরিতে ফগলাইট লাগিয়েও কুয়াশায় ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বরং ফগলাইট জ্বালানোর ফলে নৌপথ আরও কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অত্যন্ত সাদা এ লাইটের রশ্মির দিকে তাকানোর ফলে চোখে ঠিকমতো দেখতে পায় না। সব কিছু কেমন যেন ঝাপসা মনে হয়। কুয়াশার ঘনত্বের কাছে ফগলাইটে আলো যেন কুপির বাতির মতো।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যয়বহুল এই ফগলাইট গুলো আমেরিকার তৈরি এবং ওই দেশ থেকে আমদানি দেখানো হলেও ফগলাইটগুলোর কিছু যন্ত্রপাতিতে ‘মেইড ইন কোরিয়া’ লেখা পাওয়া রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে এই ফগলাইটগুলো কতটুকু বাস্তবসম্মত তা দেখতে পরীক্ষামূলক পাটুরিয়া ও মাওয়া ফেরি সেক্টরে মাত্র দু’টি ফেরিতে ফগলাইট লাগনোর সিদ্ধান্ত থাকলেও ‘বিশেষ মহলে’র চাপে নিয়ম ভেঙে ছয় কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একত্রে ১০টি ফগলাইট কেনা হয়।

সূত্র আরও জানায়, সরবরাহকৃত সাত হাজার ওয়াটের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ফগলাইটগুলো যখন ফেরিতে লাগানো হয়, তখন বিভিন্ন বিষয়ে অসংলগ্ন দেখা দিলে প্রকল্পের রিসিভিং কমিটির সব সদস্যরা লাইটগুলো গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিডিউলের সাথে ফগলাইটের মালামালের মিল না থাকায় কমিটি তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের নানা প্রলোভন দেখানোও হয়। পরে একপর্যায়ে ওই কমিটির কয়েকজনকে বদলিসহ নানা ভয় দেখিয়ে লাইটগুলো নিতে বাধ্য করা হয়।

বিআইডাব্লিইটিসির আরিচা সেক্টরের জি এম জিল্লুর রহমান জানান, অব্যাহত কুয়াশায় গত কয়েক দিন ধরে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে যায়। ফলে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে কখনো রাত ১০টা আবার কখনো রাত ১২টায় বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় অতিমাত্রায়। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের বিশেষ করে বাস যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কিন্ত প্রকৃতির ওপর কোন হাত না থাকায় কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকছে না।

তবে ফগলাইট সম্পর্কে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কুয়াশার ঘনত্ব পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফগলাইট ফেরি চলাচল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর