চট্টগ্রামে করোনার জিন বিন্যাস, যুক্তরাষ্ট্রের নমুনার সঙ্গে মিল
২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের নমুনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তদের নমুনার যথেষ্ট মিল পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এছাড়া ইউরোপ, সৌদি আরব, তাইওয়ান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার করোনাভাইরাসের সদৃশ নমুনার অস্তিত্বও পেয়েছেন তারা। এছাড়া যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি করোনার নতুন যে ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে, তার বেশ কয়েকটি মিউটেশনের একটি এখানেও দৃশ্যমান হয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা থেকে করোনাভাইরাসের (SARS-CoV-2) নমুনা সংগ্রহ করে বড় আকারে গবেষণার মাধ্যমে জিনের বিন্যাস উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করেছেন গবেষকরা। এই জিনোম সিকোয়েন্সিং থেকেই এসব তথ্য মিলেছে। গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই গবেষণাকর্ম সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন উপাচার্য শিরীণ আকতার।
গবেষণার মূল দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক। তারা হলেন— বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রবিউল হাসান ভুঁইয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমরানুল হক ও এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ।
গবেষণা দলে আরও ছিলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, আরিফ হোসাইন ও সজীব রুদ্র, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী শান্তা পাল এবং বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ছাত্র ওমর ফারুক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জীববিজ্ঞান অনুষদ ও বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের পরীক্ষাগারে এই গবেষণাকর্মটি সম্পন্ন হয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বিভাগের ১১ জেলা থেকে সংগ্রহ করা ৩০টি জিনোম বিন্যাস বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। এটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। গবেষণায় ১১টি জেলার প্রত্যেক থানা থেকে থেকে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর ‘আরএনএ’র পরিমাণ ও গুণের ওপর ভিত্তি করে ৪৬টি নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়। এর মধ্যে ৩৩টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স ৯৯ শতাংশের ওপরে উন্মোচিত হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্তদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইটালি, চেক রিপাবলিক, সৌদি আরব ও তাইওয়ানের ভাইরাসের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।
নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। কুমিল্লা ও চাঁদপুরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চেক রিপাবলিক, ভারত ও জাপানের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব ও ভারতের সদৃশ করোনাভাইরাস।
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে যুক্তরাষ্ট্র, সিয়েরা লিওন, জার্মানি, ইটালি, তাইওয়ান ও চেক রিপাবলিকের এবং খাগড়াছড়িতে অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও তাইওয়ানের নমুনার সঙ্গে সাদৃশ্য বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
ওমর ফারুক রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় সব জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইরাসের সদৃশ ভাইরাস পাওয়া গেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যে মিউটেশনটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে সেটি হচ্ছে ডি৬১৪জি। চট্টগ্রাম বিভাগেও এটি সবচেয়ে বেশি আছে। যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন স্ট্রেইনের মধ্যে ছয়টি মিউটেশনের একটি পরিবর্তন হচ্ছে ‘পি৬৮১এইচ’। এটি এখানেও পাওয়া গেছে। তবে কোনোভাবেই বলা যাবে না যে এটি যুক্তরাজ্যের সেই ভ্যারিয়েন্ট। কারণ যুক্তরাজ্যের ভাইরাসের ১৭টি মিউটেশন আছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এর মধ্যে মাত্র একটি মিউটেশন আমরা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, সব সিকোয়েন্সের বিভিন্ন লোকেশনে মোট ১২৬টি ভিন্ন ভিন্ন মিউটেশন হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মিউটেশন চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে।’
অধ্যাপক রবিউল হাসান ভুঁইয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ১২টি নমুনার জিনের বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (GISAID) ডাটাবেজে জমা দেওয়া হয়েছে (Accession no- EPI_ISL_735490, EPI_ISL_735492, EPI_ISL_735493, EPI_ISL_735494, EPI_ISL_735495, EPI_ISL_735496, EPI_ISL_735497, EPI_ISL_735498, EPI_ISL_735499, EPI_ISL_735500, EPI_ISL_735501 and EPI_ISL_735502)।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের কোভিড-১৯-এর ওপর সার্বিক চিত্র তুলে ধরা। উন্মোচন করা জিনের বিন্যাস চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলায় ভাইরাসের প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল, বৈচিত্র্য ও মিউটেশনের মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেবে, যেটি ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুন-
- সিভাসু’তে করোনার ৭ নমুনার জিনোম সিকুয়েন্স নির্ণয়
- এবার করোনার জিনোম সিকোয়েন্স নির্ণয় করলো এনআইবি
- যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট, কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?
- ‘দেশে করোনার ৮ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত, টিকা আবিষ্কারে সহায়ক হবে’
- বাংলাদেশে করোনার নতুন রূপ, সংশয়ে ভ্যাকসিনের ‘কার্যকারিতা’!
- ‘যুক্তরাজ্যের করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নেই’
- দেশে করোনার প্রথম জিনোম সিকুয়েন্স উদঘাটন করল সিএইচআরএফ
- ‘করোনাভাইরাসের ৩২৪ টি নমুনায় ৪১৬০ টি মিউটেশন পাওয়া গেছে দেশে’
করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিনোম সিকোয়েন্স টপ নিউজ বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি যুক্তরাষ্ট্রের নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের নমুনার সঙ্গে মিল