বিজ্ঞাপন

দেশে করোনার প্রথম জিনোম সিকুয়েন্স উদঘাটন করল সিএইচআরএফ

May 12, 2020 | 8:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) জিনোম সিকুয়েন্স উদঘাটন করেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ)। বাংলাদেশে এই প্রথম করোনাভাইরাসের কোনো জিনোম সিকুয়েন্স উদঘাটন করলো কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে এই জিনোম সিকুয়েন্স ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সবচেয়ে বড় ডেটাবেজ জিআইএসএইড-এ জমা রাখার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখানে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে করোনাভাইরাসের প্রায় ১৮ হাজার জিনোম সিকুয়েন্স জমা পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১২ মে) চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ড. সমীর বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কতটা শক্তিশালী, তা নিয়ে আমরা গবেষণা করছিলাম। এরই অংশ হিসেবে এই ভাইরাসের একটি জিনোম সিকুয়েন্স শনাক্ত করতে পেরেছি। আমাদের আরও গবেষণা বাকি আছে।

জার্মান সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিআইএসএইড) সংস্থাটি করোনাভাইরাসের সব ধরনের জিনোম সিকুয়েন্সের তথ্য জমা রাখছে। বিভিন্ন দেশ থেকে এরই মধ্যে ১৮ হাজার করোনা জিনোম সিকুয়েন্স জমা পড়েছে এই সংস্থার কাছে।

বিজ্ঞাপন

ড. সমীর জানান, তাদের জিনোম সিকুয়েন্সটি সোমবার (১১ মে) পাঠানো হয়েছে জিআইএসএইড-এর কাছে।

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন যে নমুনা থেকে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স শনাক্ত করেছে, সেটি তারা সংগ্রহ করেছে গত ১৮ এপ্রিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২২ বছর বয়সী এক তরুণীর শরীর থেকে নমুনাটি সংগ্রহ করা হয়।

এদিকে, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. সেজুতি সাহা। সিকুয়েন্সিংয়ের সম্পূর্ণ কাজটি প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার ল্যাবে করা হয়েছে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী সিকুয়েন্সিংয়ের তথ্য-উপাত্ত গ্লোবাল জিনোম ডাটাবেজ, GISAID-এ জমা দেওয়া হয়েছে। এই তথ্য-উপাত্ত শিগগিরই সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের মতো সংক্রমণশীল একটি ভাইরাসকে সিকুয়েন্সিং করা খুবই কঠিন। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে মেটাজিনোমিক সিকুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের কাজটি সম্পন্ন করেছে। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের নমুনা থেকে আরও কিছু ভাইরাসের সিকুয়েন্সিং করতে সক্ষম হবো, যা আমদের ভাইরাসটির উৎপত্তি ও গতি-প্রকৃতি বুঝতে এবং প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে সাহায্য করবে। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ও চ্যান জুকারবার্গ বায়োহ্যাব ইনিশিয়েটিভ সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

জিনোম সিকুয়েন্স কী?

জিনোম সিকুয়েন্সিং প্রক্রিয়াকে সহজ কথায় বলা যায় জিনের গঠন চিহ্নিত করা। একটি ভাইরাসের মধ্যে জিন কীভাবে সাজানো রয়েছে, সেই তথ্যই হলো জিনোম সিকুয়েন্স। সেটি শনাক্ত করতে পারলেই বোঝা সম্ভব হয়, কিভাবে একটি ভাইরাস কিভাবে বেঁচে থাকে কিংবা কিভাবে সংক্রামক হয়ে মানুষ বা অন্য কোনো পোষকের শরীরে বেঁচে থাকে।

একইভাবে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স জানা সম্ভব হলে এর উপস্থিতি নির্ণয়ে কিট তৈরি এবং প্রতিষেধক উৎপাদন ও উৎস সম্পর্কে তথ্য জানা সম্ভব হবে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় সহজ হবে। ফলে লক্ষণ ও উপসর্গ বোঝা সহজ হবে, রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার পথ প্রশস্ত হবে এবং ওষুধ তৈরির গবেষণাও সহজ হবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করা সহজতর হবে।

অন্য অনেক ভাইরাসের চেয়ে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টি একটু ভিন্ন। কারণ বিভিন্ন দেশ থেকে করোনাভাইরাসের যে জিনোম সিকুয়েন্সগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর একটি আরেকটির সঙ্গে মিলছে না। গবেষকরা বলছেন, বারবার মিউটেশন ঘটছে এই ভাইরাসের। ফলে অঞ্চলভেদে বদলে যাচ্ছে এর গতিপ্রকৃতি। তারপরও এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর জিনোম সিকুয়েন্স বিশ্লেষণের বিকল্প নেই। কারণ বিভিন্ন এলাকার করোনায় আক্রান্তদের ভাইরাল স্ট্রেনের পাশাপাশি ওই এলাকায় সংক্রমণের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করার মাধ্যমেই জানা সম্ভব, এই ভাইরাসের কোন ধরনের স্ট্রেন কতটা শক্তিশালী। আবার মিউটেশনের মাধ্যমে জিনোম সিকুয়েন্সে বদল এলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে অন্যান্য ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসও আর জিনোম সিকুয়েন্স বদলাতে পারবে না। ওই সময় থেকে সে দুর্বল হতে থাকবে। এই প্রক্রিয়াগুলো চিহ্নিত করতেও জিনোম সিকুয়েন্স বিশ্লেষণের বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন