শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল যেন বোমার খনি!
৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৩৯
ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল যেন বোমার খনি। সেখানে এক এক করে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে পাঁচটি বোমা। এমনকি আরও বোমা আছে কিনা সেটাও অজানা। ফলে শাহজালালের কর্মকর্তা ও নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে কর্মরতরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। যদিও সিভিল অ্যাভিয়েশন বলছে, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। আর এ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল থেকে প্রথম ২৫০ কেজি ওজনের বোমাটি পাওয়া যায় ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৪, ১৯, ২৮ এবং সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর পর্যায়ক্রমে আর চারটি বোমা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর সবগুলো বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে বিমানবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। আর সবগুলো বোমা কড়া সতর্কতার সঙ্গে ধ্বংসও করেছে তারা।
এদিকে শাহজালালে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের পুরো এলাকা এখন বিমানবাহিনী স্ক্রিনিং করছে। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর বিমানবাহিনী স্ক্রিনিং করতে গিয়ে একটি বোমা পায়। তবে শাহজালালে কর্মরত অনেকেই বলছে, পাইলিংয়ের কাজ করতে গিয়ে যদি জোরে আঘাত লেগে কোন বোমা বিষ্ফোরিত হয় তাহলে তো সব শেষ। এমনকি স্ক্রিনিংয়েও যদিও কোনো বোমার অস্তিত্ব লুকানো থাকে বা ধরা না পড়ে আর সেভাবেই যদি কাঠামো নির্মাণ করা হয় তাহলে পরবর্তী সময়ে কী হবে?- এমন শঙ্কায় রয়েছেন শাহজালালে কর্মরত অনেকই।
অপরদিকে সিভিল অ্যাভিয়েশন বলছে, নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে পাওয়া যাওয়া বোমাগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েরও হতে পারে। তবে এগুলোর নিজে থেকে বিষ্ফোরণ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। যদি এটাকে কোনো কিছু আঘাত না করে। আর সবকিছু বিবেচনা করে পুরো এলাকা বিভিন্নভাবে স্ক্রিনিং করে বাকি কাজ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে যেসব বোমা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো এমনিতে বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। এছাড়া উদ্ধার হওয়া বোমাগুলোকে সজোরে আঘাত না করলে এগুলো বিস্ফোরিত হবে না। বোমাগুলো মাটির বেশ গভীরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এগুলো এখন পাওয়া যাওয়ায় ভালো হচ্ছে। কেননা এগুলো রেখে কোনো কাঠামো নির্মাণ করলে সেখানে ঝুঁকি থেকেই যেত।’
অপরদিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টামির্নাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কপাল ভালো এখন বোমাগুলো পাওয়া যাচ্ছে। আর যদি না পাওয়া যেত কিংবা এভাবেই যদি কাঠামো নির্মাণ হতো তাহলে ঝুঁকি থেকেই যেত। তবে এখন আমরা সবকিছু স্ক্রিনিং করে মাটির পাইলিং করছি। ফলে ঝুঁকি কম। আর সতর্কতা অবলম্বন করেই সব কাজ করা হচ্ছে। বিমানবাহিনীর ইউনিটও কাজ করছে।’
এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে বোমাগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাতে শঙ্কার কিছু নেই। এগুলো অনেক আগের নিক্ষেপ করা। এমনিতেই এই বোমাগুলো নিজে থেকে বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তাই আতঙ্কেরও কিছু নেই। বরং কাজ করতে গিয়ে বোমা পাওয়া গেলে সেগুলো দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।’
যদি কোন বোমা তাজা থাকে তাহলে কী হবে?- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বা সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। বোমার ভেতরে একটি ফিউজ থাকে, যেখানে আঘাত না করলে বিস্ফোরণ হয় না। আর বিমানবন্দরে যে বোমাগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো মেয়াদ সাধারণত ১০০ বছরের হয়ে থাকে। তবে যেহেতু পাইলিংয়ের কাজ চলছে তাই জোরে আঘাত লাগলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বলছি সতর্ক থাকতে হবে।
অন্যদিকে সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ যেন একটা বোমার খনি। মুক্তিযোদ্ধার সময় আকাশ থেকে বোমাগুলো ফেলা হয়েছে। আর যে জায়গাতে বোমাগুলো পাওয়া যাচ্ছে আগে সেখানে ডোবা, নালা ও জলাশয় ছিল। পাইলিংয়ের সময় ২০ ফিটের মতো নিচে থেকে বোমাগুলো পাওয়া যাচ্ছে। তবে আরও বোমা থাকতে পারে। খনন করার আগে বিমানবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট মাটি স্ক্রিনিং করে দেওয়ার পর এখন পাইলিং করা হচ্ছে। আর নিরাপত্তার জন্য মাটি একটি লেভেল করে খোঁড়া হচ্ছে।’
এতে শাহজালালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে কিনা?- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘না নেই। এই বোমাগুলোর নিজে থেকে বিস্ফোরিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সজোরে আঘাত লাগলেই কেবল দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ঝুঁকি মনে করছি না। এগুলো বিস্ফোরিত হতে অনেক চাপ লাগবে। তবে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য বিমানবাহিনী কাজ করছে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে পুরোপুরি সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।