Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘২০২০ সালে সড়কে ৬ হাজার ৬৮৬ জনের প্রাণহানি’


৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:০৩

ঢাকা: গত বছর ২০২০ সালে সারাদেশে ৮ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও ৮ হাজার ৬ শ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রগুলোতে প্রচারিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী ২০২০ সালে ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত হয়েছেন এবং ৮ হাজার ৬ শ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২ হাজার ৩৯ জন চালক, ১ হাজার ৫৯৪ জন পথচারী, ৭৫৭ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৭০৬ জন ছাত্র-ছাত্রী, ১০৪ জন শিক্ষক, ২০০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯১৮ জন নারী, ৫৪১ জন শিশু, ২৯ জন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, আট জন আইনজীবী ও পাঁচ জন প্রকৌশলী এবং ১৪৪ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে ১ হাজার ৩৯২ জন পথচারী, ১৫ জন সেনা সদস্য, ৫২ জন পুলিশ, ১৫ জন আনসার সদস্য, এক জন র‌্যাব সদস্য, দুই জন বিজিবি সদস্য, এক জন সিআইডি সদস্য, এক জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, এক জন বিমানবাহিনীর সদস্য, পাঁচ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পাঁচ জন সাংবাদিক, ৬৫৬ জন নারী, ৪১৮ জন শিশু, ৩৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী, ৯২ জন শিক্ষক, ১ হাজার ৩৯০ জন চালক, ৩৫৫ জন পরিবহন শ্রমিক, চার জন প্রকৌশলী, এক জন আইনজীবী, ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ২৩ জন চিকিৎসক নিহত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ২২০ জন পঙ্গুত্ব বরণ করে।

এই সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৬ হাজার ৭৩৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ বাস, ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, আট দশমিক ৫২ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ০৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০ দশমিক ৩৪ শতাংশ চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং ০ দশমিক ৮১ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ মোটরসাইকেলে, ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনায়, ১ দশমিক ০৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইকে, ০ দশমিক ১৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাসে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও পাঁচ দশমিক ৮৭ শতাংশ বাস, এক দশমিক ৪২ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, ০ দশমকি ৮৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা কমেছে।

পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা তিন দশমিক ৩৯ শতাংশ, বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হায়িয়ে খাদে পড়ার ঘটনা ০ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০ দশমিক ১৬ শতাংশ কমলেও মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা তিন দশমকি সাত শতাংশ বেড়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৮ দশমকি ৯৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৯ দশমকি ১১ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার চার দশমকি ৩৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, দুই দশমিক ০৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০ দশমিক ৮১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও জাতীয় মহাসড়কে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, রেলক্রসিং এ ০ দশমিক ১৬ শতাংশ, ফিডার রোডে দুই দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কতগুলো বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- যানবাহনের বেপরোয়া গতি, বিপদজনক অভারটেকিং, রাস্তাঘাটের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজী, রাস্তার পাশে হাট-বাজার ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কতগুলো সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করা। আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কারপূর্বক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন উদ্যোগ নেওয়া, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী মহাসড়কের উভয় পাশে ১০ মিটার খালি রাখার বিধান বাস্তবায়ন করা, দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অংকন করা, গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করাসহ মোট ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সারাবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, `সড়ক পরিবহণ নতুন আইন ও পুরোনো আইন বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করছি না। আইন বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়েছে তাও আমাদের মনে হচ্ছে না।`

সংগঠনটির উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরীফুজ্জামান শরিফ বলেন, `গত বছরের তুলনায় যে দুর্ঘটনা কমেছে তা মূলত কারোনাকালে যানবাহন বন্ধ থাকার কারণে। সত্যি বলতে দুর্ঘটনার চিত্র একটুও কমেনি। জাতীর কাছে দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিবছর আমরা এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করি। কাউকে বিব্রত করার জন্য নয়, রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে ও নাগরিকদের সচেতন করতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।`

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্মমহাসচিব মনিরুল হক চৌধুরী‌।

টপ নিউজ নিহত যাত্রীকল্যাণ যাত্রীকল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর