চট্টগ্রামের নতুন ‘নগরপিতা’ রেজাউল
২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ৩ লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে হারিয়ে পাঁচ বছরের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ‘নগরপিতার’ চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। আলোচনার প্রায় বাইরে থাকা রেজাউল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সেই নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মহামারি পরিস্থিতিতে একপর্যায়ে নির্বাচন নিয়েই সংশয় তৈরি হয়।
তবে ১০ মাস পর ফিরে আসা নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন রেজাউল। চট্টগ্রাম নগরবাসী পাঁচ বছরের জন্য তাদের সেবার দায়িত্ব নেওয়ার রায় দিয়েছেন রেজাউলকে।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে রেজাউল করিমকে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফল ঘোষণা করছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম সিটির ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটারের মধ্যে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩ জন। বৈধ ভোটের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০। বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৫৩ ভোট। ভোটের শতকরা হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
নির্বাচনের মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত থাকা দু’টি কেন্দ্র বাদে ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলে রেজাউল করিম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোটখাট বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। একটি ওয়ার্ডে দু’টি কেন্দ্রে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে রেজাউল করিম চৌধুরী বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।’
ফল ঘোষণার সময় জিমনেশমিয়ামে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও রেজাউল করিম চৌধুরী আসেননি। তার প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মোট ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে মেয়র পদে নির্বাচন হয়েছে। তবে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে দু’টি কেন্দ্রে সহিংসতার কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় বাকি ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের পর সন্ধ্যা ৬টায় ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়।
আরও পড়ুন-
- ভোট দিলেন নওফেল
- ফল যা-ই হোক মেনে নেব: রেজাউল করিম
- চট্টগ্রামের ‘নগরপিতা’ নির্বাচনের ভোট শুরু
- চসিক নির্বাচনের শুরুতেই সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১
- পাথরঘাটায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আটক
- খুলশিতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মোটরসাইকেল ভাঙচুর
- উত্তাপ ছড়ালেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাই, প্রাণও গেল একজনের
- চসিক নির্বাচন: ভোট বর্জন করলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী
- চট্রগ্রামে নির্বাচনের নামে চূড়ান্ত তামাশা হচ্ছে: রুহুল কবির রিজভী
- লালখানে কাউন্সিলর প্রার্থী ও মনোনয়ন বঞ্চিত’র সমর্থকদের সংঘর্ষ
- ভোর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসার সামনে সন্ত্রাসীরা: শাহাদাত
সজ্জন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিম করিম চৌধুরী একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর সেনানী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে এই প্রথম নির্বাচনে লড়ছেন তিনি।
চট্টগ্রাম শহরের ভূমিপুত্র রেজাউল করিম। নগরীর ঐতিহ্যবাহী বহদ্দার বাড়ির সন্তান তিনি। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা রেজাউল নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শুরু ষাটের দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর উত্তর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। যুবলীগের সদস্যও ছিলেন।
আশির দশকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে ভিড়েছিলেন প্রয়াত নেতা আব্দুর রাজ্জাকের বাকশালের সঙ্গে। পরে আবার আওয়ামী লীগে ফিরে সাংগঠনিক দক্ষতায় মূলধারায় জায়গা করে নেন। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পত্রিকা বের করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে উজ্জীবিত করতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপজীব্য করে বইও লিখেছেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন রেজাউল।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন হাতি প্রতীক নিয়ে বিএনপি সমর্থিত কমলালেবু প্রতীকের প্রার্থী এম মনজুর আলমকে পরাজিত করেছিলেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির মীর মো. নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির এম মনজুর আলম ও আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন। এদের মধ্যে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। পরপর তিন দফা নির্বাচিত হয়ে তিনি ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন চসিকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন চসিক নির্বাচন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী