‘যারা সমালোচনা করেছে তারাই সবার আগে ভ্যাকসিন নিচ্ছে’
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০০:৪৫
ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বিষয়েও অনেক সমালোচনা করা হয়েছে। অনেকে বলেছেন ভ্যাকসিন আসবেই না বাংলাদেশে, ভ্যাকসিন আসলেও কার্যকর হবে না। যারা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন, তারাই এখন সবার আগে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত কৈশোর স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বিষয়ক এক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনায় আমরা অনেক ভালো আছি। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ভালো আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনাকালে ৯ মাস কাজ করেছে। করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন রাস্তায় কাজ করেছে এবং তারাই আবার মানুষের সমালোচনা-কটাক্ষ শুনেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন কাজ করেছে বলেই ১৭ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র আট হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকায় পৌনে পাঁচ লাখ লোক মারা গেছে। ভারতে পৌনে দুই লাখ লোক মারা গেছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সবকিছুই বৃথা হয়ে যাবে। যদি আমরা করোনা ভাইরাসকে কন্ট্রোল করতে না পারতাম, তাহলে আজকে এখানে আপনারা সার্ভে রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারতেন না। এখানে কোনো মিটিং করতে পারতেন না। ভয়ে আমরা কেউ আসতাম না। মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেত। হাসপাতালে জায়গা হতো না। রাস্তাঘাটে লোকজন মরে পড়ে থাকত।
তিনি আরও বলেন, আজকে বাস, ট্রেন ভর্তি হয়ে মানুষ যাতায়াত করছে। এই সাহস পায় কোথায়? কারণ দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। যে দেশে করোনা কন্ট্রোলে নাই তারা পারে না। ইউরোপ থেকে এসেছে একজন সচিব সাহেব। আমাকে এসে বলছে তারা জানালা দিয়েও উঁকি দিতে ভয় পাচ্ছে। জানালা দিয়ে উঁকি দিলেই করোনা হবে। এই ধরণের পরিস্থিতি ওখানে। আমাদের ইকোনমিক গ্রোথ রেট ভালো আছে। কারণ আমাদের করোনা নিয়ন্ত্রণে কাছে।
কিশোরদের স্বাস্থ্য প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে—এসব বিষয়ে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো না। আমাদের খাবার-দাবারেও ব্যালেন্স ফুড গ্রহণ করতে হবে। শুধু ফাস্টফুড না, সেই সাথে ফলমূল শাকসবজিও খেতে হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখন মোবাইলে গেম খেলে। কিন্তু তারা মাঠে যায় না। মাঠের আলো-বাতাস তাদের গায়ে লাগে না। এদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের যেভাবে গাইড করব পরবর্তীতে তারা সেভাবেই গড়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা বই পড়েই না। লাইব্রেরিতে যায় না। একটা আইপ্যাডের মধ্যেও ৫০০ বই রাখা যায়। কিন্তু বই পড়তে আমরা ছেলেমেয়েদের দেখি না। এই বিষয়টাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
মাদক থেকে ছেলেমেয়েদের দূরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাদক একটি বড় সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক চেষ্টা করছেন, অনেক কাজ করছে এটি নির্মূল করতে। আমাদের পরিবারেরও দায়িত্ব আছে যাতে মাদক থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন দূরে থাকে।
এদিন বাংলাদেশ কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য ও কল্যাণ জরিপ ২০১৯-২০ এর তথ্য প্রকাশনা অনুষ্ঠানে একটি সমীক্ষা ফল প্রকাশ করা হয়। দেশব্যাপী এই জরিপ পরিচালনা করে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পপুলেশন রিসার্চ এন্ড ট্রেইনিং (নিপোর্ট) এবং টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করে আইসিডিডিআরবি’র রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) প্রকল্প এবং ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)। জরিপে অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি, যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা এফসিডিও এবং বাংলাদেশ সরকার।
রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলিনুর, নিপোর্ট-এর ডিরেক্টর জেনারেল সুশান্ত কুমার সাহা, ইউএসএআইডির জনসংখ্যা, পুষ্টি ও শিক্ষা অফিসের পরিচালক জারজিস সিধওয়াসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি