১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ২ হাজার কোটি টাকা
১ মার্চ ২০২১ ২৩:৫৩
ঢাকা: চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। মূল এডিপিতে এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৩২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সেখান থেকে কাঁটছাঁট করে সংশোধিত বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ৩১ হাজার ৩৯১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে এসব প্রকল্পে বরাদ্দ কমেছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
১০ মেগা প্রকল্পে সার্বিকভাবে বরাদ্দ কমলেও এর মধ্যে বরাদ্দ কমেছে মূলত পাঁচটি প্রকল্পে। বাকি পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে চারটিতে বরাদ্দ বেড়েছে, একটি প্রকল্পে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রয়েছে। সংশোধিত এই বরাদ্দ চূড়ান্ত করে সংশোধিত এডিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রস্তাব করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২ মার্চ) অনুষ্ঠেয় এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, মূলত করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এসব প্রকল্পের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পগুলোর কাজে গতি এলেও তা সার্বিক অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত কাঙ্ক্ষিত মাত্রা পূরণে সম্ভব হবে না। সে কারণেই অর্থ ব্যয়ও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণের তুলনায় কমছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মহামারির প্রভাব আমরা অস্বীকার করতে পারি না। এই সংক্রমণের মধ্যে সাধারণ ছুটির সময় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কোনো কাজ করাই সম্ভব হয়নি। এখনো অনেক প্রকল্প পুরোদমে গতি ফিরে আসেনি। এই বাস্তবতা মানতে হবে। তবে আমাদের হাতে অর্থবছরের বাকি যে সময়টুকু আছে (মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাস), সেই সময়টুকু কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছি আমরা।
এনইসি সভায় উত্থাপনের জন্য যে সংশোধিত এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে, তার কার্যপত্রের খসড়া এসেছে সারাবাংলার হাতে। সেটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়— সংশোধিত এডিপিতে মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, মূল এডিপিতেও একই বরাদ্দ ছিল। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের জন্য মূল এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৩০১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৫১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৭৭০ কোটি ২২ লাখ টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত প্রস্তাব করা হচ্ছে ৫ হাজার ৪৫৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৫২৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ৭৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের জায়গায় ৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হচ্ছে ১৪৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এর বাইরে পাঁচ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এর মধ্যে মূল এডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এখান ৫ হাজার ৫২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ১০ হাজার ১৬৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটিতেই কমছে সর্বোচ্চ বরাদ্দ।
এছাড়া পদ্মাসেতু প্রকল্পে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। দুই হাজার ৯শ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে দুই হাজার ৯৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এছাড়া ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ৭৫৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে ৪০ কোটি টাকা কমিয়ে ৭১৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে এক হাজার ৫শ কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে ৫১০ কোটি টাকা কমিয়ে প্রস্তাব করা হচ্ছে ৯৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের অনুকূলে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এখন ১২৫ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
পদ্মাসেতু মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ী মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র