রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি এডিটরস গিল্ড ও সম্পাদক পরিষদের
১৮ মে ২০২১ ১৯:৩৮
ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলায় কারাবন্দি প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি করেছে সম্পাদকদের দুই সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও এডিটরস গিল্ড। একজন সাংবাদিকের কর্তব্য পালনে গিয়ে হেনস্তার শিকার হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠন দুইটি।
সোমবার (১৭ মে) দিবাগত মধ্যরাত পেরিয়ে এডিটসর গিল্ড এবং মঙ্গলবার (১৮ মে) সম্পাদক পরিষদ গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবির কথা জানিয়েছে।
এর আগে, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার (১৭ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে।
আরও পড়ুন-
- রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা
- জামিন পাননি সাংবাদিক রোজিনা, রিমান্ডও নাকচ
- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং ‘বয়কট’ ২ সাংবাদিক সংগঠনের
- রোজিনাকে হেনস্তাকারীদের শাস্তি দাবি সাংবাদিক নেতাদের
- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং বয়কট করে বেরিয়ে গেলেন সাংবাদিকরা
- রোজিনার জামিন না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যের সব ব্রিফিং বয়কট ঘোষণা
- তথ্য চুরির মামলা আমলাতন্ত্রের নিকৃষ্টতম উদাহরণ: জিএমআরএফ
সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবুর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এডিটরস গিল্ড একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এডিটরস গিল্ড মনে করে, দেশের স্বনামখ্যাত একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও কেন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো না, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নীতি অনুসরণ করলেও আমলাতন্ত্রের ভেতরে বা প্রশাসনে কারা এসব কাজ করে গণমাধ্যমকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে, তারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে এডিটরস গিল্ড। সংগঠনটি বলছে, সত্য তুলে ধরা, মিথ্যা উন্মোচন করা, দুর্নীতির চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরাই সাংবাদিকতার কাজ। রোজিনা ইসলাম সেই কাজ করছিলেন। যদি কোথাও আইনের ব্ত্যয় ঘটে থাকে, সেটি আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সুরাহাই কাম্য। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়।
এডিটরস গিল্ড ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছে। অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে তার মুক্তিও দাবি করছে।
এদিকে, সচিবালয়ে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা হেনস্তা, সারারাত থানায় রাখা, আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন ও জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ প্রকাশ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে সম্পাদক পরিষদ বলছে, সম্পাদক পরিষদ গভীর উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই যুগে এই সময়ে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আমলের করা আইনে মামলা দায়ের সংশ্লিষ্টদের সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের নেতিবাচক মনোভাব ও অশুভ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের চেষ্টার পাশাপাশি আগামী দিনের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের জন্য হুমকি। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের হীন চেষ্টা সংবাদপত্রের অস্তিত্বকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয় ও পেশাকে চ্যালেঞ্জের দিকে নিয়ে যায়।
সম্পাদক পরিষদ মনে করে, এই নজিরবিহীন ঘটনা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে জিম্মি করে রাখা, তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার ঘটনা শুধু দুঃখজনক নয়, এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন আইনে একজন সাংবাদিককে এভাবে আটকে রাখা হলো, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তা বের করতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে দোষীদের বিরুদ্ধে।
সম্পাদক পরিষদ রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্তভাবে মুক্তির পাশাপাশি পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের পক্ষে আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। আদালত দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে দেন। জামিন আবেদন অনিষ্পন্ন রেখে রোজিনা ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর