Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে ২২৫ স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধন কাল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২১ ১৫:৪২

ঢাকা: দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোসহ নদ-নদী ভাঙন রোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা ১৭৫টি স্থাপনার উদ্বোধন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর জন্য আরও ৫০টি স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার (২৩ মে) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এসব স্থাপনা ও ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২২ মে) শনিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব স্থাপনা ও ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করবেন।

উদ্বোধন হওয়ার অপেক্ষায় থাকা এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ ও গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র এবং পাঁচটি মুজিব কিল্লা। অন্যদিকে আরও ৫০টি মুজিব কিল্লা’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে রোববার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগের নিয়মিত ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও ষাটের দশক পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধারণা ছিল মূলত ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মানেই ছিল দুর্যোগ পরবর্তী পদক্ষেপ। ১৯৭০ সালে এ ভূখণ্ডে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। ওই সময় দুর্যোগে ক্লিষ্ট বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক মনোভাব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মর্মাহত করে। তিনি সত্তরের সেই ঐতিহাসিক নিরর্বাচনের প্রচার কাজ ফেলেও দুর্গত-অবহেলিত মানুষের মাঝে ছুটে যান। তখনই তিনি দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থার গুরুত্ব অনুভব করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ধারণার প্যারাডাইম শিফটের সূচনা মূলত সেখানেই।

এনামুর রহমান বলেন, দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়, যা সর্বসাধারণের কাছে মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত। এরই আধুনিক রূপ হিসেবে উপকূলীয় ও বন্যা উপদ্রুত ১৪৮টি উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। উপকূলীয় দুর্গত জনগণ যেমন সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে, তেমনি তাদের প্রাণিসম্পদকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবে । এছাড়া জনসাধারণের খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাট-বাজার হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকায় বয়স্ক, গর্ভবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধিতাবান্ধব ৩২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ ৫৬ হাজার বিপদাপন্ন মানুষ এবং প্রায় ৪৪ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ আছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের গবাদিপশুসহ এসব আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয় নিতে পারবেন।

তিনি বলেন, বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙন এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে বন্যাপীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দ্বিতল ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এবং ২৩ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৮-২০২২ মেয়াদে ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সাড়াদানের অংশ হিসেবে ত্রাণ সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত ও দুর্যোগের পর মানুষের মাঝে প্রাথমিক জরুরি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো নিশ্চিত করতে ৬৪টি জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগে দ্রুত উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অ্যাকোয়াটিক সি সার্চবোট, মেরিন রেসকিউ বোট, মেগাফোন সাইরেনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম সহজ করার জন্য আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুর্যোগকালীন ঘূর্ণিঝড় প্রবণ উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি পরিশোধনে ৩০টি মাউন্টেড স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কারণে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদাপন্নতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সহজ হয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

এনামুর রহমান টপ নিউজ ত্রাণ মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর