মুখ থুবড়ে পড়েছে শি জিনপিংয়ের ‘হার্ডলাইন ডিপ্লোম্যাসি’
২৮ মে ২০২১ ১২:২৫
সম্প্রতি চীনের সঙ্গে কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট অন ইনভেস্টমেন্ট (সিএআই) চুক্তির অনুমোদন স্থগিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্ট। অথচ ইইউয়ের সঙ্গে প্রাথমিক ওই বিনিয়োগ চুক্তিকে মাত্র ছয় মাস আগেও চীন তাদের এক বিশাল কৌশলগত বিজয় বলে উদযাপন করেছিল। ২২ মে ইইউয়ের ওই সিদ্ধান্তের পর চীন একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছরপূর্তি উদযাপন হবে আগামী ১ জুলাই। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শাসনামলে পার্টির শতবর্ষপূর্তি ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে পালন করার কথা রয়েছে। এমন একটি উপলক্ষের ঠিক একমাস আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে আসা খবরটি এই উদযাপনকে অনেকটাই মলিন করে দেওয়ার কারণ হয়ে উঠেছে।
পার্টির কিছু সদস্য এরই মধ্যে আশঙ্কা জানিয়েছেন— কূটনৈতিক অঙ্গনের তিক্ত বাস্তবতা পার্টির শতবর্ষপূর্তি উৎসবের মেজাজ নষ্ট করে দিচ্ছে। এতদিন কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল, এখন ইইউয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক খাদের কিনারায় গিয়ে ঠেকেছে।
পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের এমন অবনতিতে এটা ধারণা করাই যায়— পার্টির শতবর্ষ পূরণের এই মাহেন্দ্রক্ষণে খুব বেশি পশ্চিমা নেতাদের কাছ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পাচ্ছে না বেইজিং। প্রেসিডেন্টের হাতে এখন খেলার মতো খুব বেশি কার্ডও নেই।
ইইউয়ের সঙ্গে চীনের ওই বিনিয়োগ চুক্তিটি সই হয়েছিল ২০২০ সালের শেষের দিকে। ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কারণে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকে। শি জিনপিং প্রায় সাত বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে ইইউয়ের সঙ্গে ঠিক সেই সময়ই চুক্তিটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে সময় আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে, ঠিক সেই সময় ইইউয়ের সঙ্গে এমন চুক্তি চীনের জন্য আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশাল সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
চীনের জন্য ওই চুক্তিটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব যত বেশি, তার চেয়েও এর গুরুত্ব বেশি রাজনৈতিক দিক থেকে। কেননা ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে ইইউয়ের সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্ক ছিল অনেকটাই তিক্ত। অনেক বিশ্লেষকের মতে, শি জিনপিং ট্রান্স আটলান্টিক জোটে একটি পেরেক ঠোকার জন্য ঠিক ওই হিসাবটাই করেছিলেন। আর তিনি তাতে সফলও হন। ফলে চুক্তিটি হয়েছিল।
কিন্তু এখন ওই বিনিয়োগ চুক্তির আকাশে কালো মেঘ জমেছে। গত ২০ মে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এই চুক্তিটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে চুক্তিটি প্রাথমিক পর্যায়েই কার্যকর হওয়ার রাস্তা কঠিন হয়ে গেছে।
চীন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই চুক্তিটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। গত ১৭ মে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগিকে ফোন করেছিলেন। তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘চীন-ইইউ বিনিয়োগ চুক্তি সই ও তা প্রাথমিক পর্যায় থেকে তা খুব দ্রুত কার্যকর করার জন্য দুই দেশকে সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত।
ইউরোপে চীনের সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের মধ্যে একটি ইতালি। দেশটি ইউরোপ থেকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সদস্য। গ্রুপ অব সেভেন (জি-৭) সদস্যদের মধ্যে একমাত্র দেশ ইতালি, যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য, এ বছর জি-২০ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবে ইতালি। দেশটির রাজধানী রোমে আগামী অক্টোবরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
চীন আশা করেছিল, রোমে জি-২০ সম্মেলনের আগেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিনিয়োগ চুক্তিটি নিয়ে অন্তত আলোচনা, বিচার-বিতর্ক শেষ হবে। কিন্তু লি কেকিংয়ের সর্বশেষ প্রচেষ্টায় কোনো ফল আসেনি। ইইউয়ের সঙ্গে চীনের মানবাধিকার ইস্যুগুলো এরই মধ্যে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে সেখান থেকে কোনো সহজ সমাধান সম্ভব ছিল না।
গত মার্চে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর বেইজিংয়ের খারাপ ব্যবহারের অভিযোগে চীনা কর্মকর্তাদের ওপর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। ১৯৮৯ সালে চীনের তিয়ানআনমেন স্কয়ার ক্র্যাকডাউনের পর এটাই চীনা কর্মকর্তাদের উপর ইইউয়ের কোনো নিষেধাজ্ঞা।
যদি অর্থনীতির চশমা দিয়ে সুক্ষ্মভাবে বিনিয়োগ চুক্তিটিকে দেখা হয়, তাহলে দেখা যায়— ওই চুক্তির মাধ্যমে গত বছর ইইউয়ের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল চীন। এই বিনিয়োগ চুক্তির মাধ্যমে নানা বাধা দূর করে চীনের বাজারে ইইউ দেশগুলোর সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হতো। এতে দুই পক্ষই লাভবান হতো।
চীন বরাবরই এই চুক্তিকে একটি ‘উইন-উইন ডিল’ বলে আখ্যায়িত করে আসছিল। কিন্তু ইইউ মানবাধিকারের ইস্যুগুলোকে পাশ কাটিয়ে এই চুক্তিটি নিয়ে এগুতে অস্বীকৃতি জানায়।
এরই মধ্যে ইউরোপে চীনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরেকবার ধাক্কা খায়। তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্রের একটি লিথুনিয়া ঘোষণা করে, তারা ‘১৭+১ সহযোগিতা কাঠামো’ থেকে বেরিয়ে যাবে। এটি মূলত মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ১৭টি দেশ ও চীনের একটি সহযোগিতা জোট, যা ২০১২ সালে চীনের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল। এই ‘১৭+১ কাঠামো’ ইউরোপে চীনের প্রভাব বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক উদ্যোগ। এছাড়া এটি রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভকেও সাহায্য করে।
এই ‘১৭+১ কাঠামো’ যে কত গুরুত্বপূর্ণ, সেই বার্তা দিতে গত ফেব্রুয়ারি এক অনলাইন বৈঠকে লি কেকিয়াংয়ের বদলে শি জিনপিং নিজে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২২ মে লিথুনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েলিউস ল্যান্ডসবেরজিস এক ঘোষণায় জানান, তার দেশ ওই কাঠামো থেকে বেরিয়ে গেছে।
এই ‘১৭+১ কাঠামো’র কিছু সদস্য আবার ইউরোপীয়ান ইউনিয়নেরও সদস্য। অন্যদিকে বেইজিংয়ের সবসময়ের একটি লক্ষ্য হলো ইইউয়ের বিভিন্ন নীতিমালায় প্রভাব বিস্তার করা, যেন এসব নীতি চীনের জন্য সুবিধাজনক হয়। ‘১৭+১ কাঠামো’র সদস্যদের দিকে নীতিমালা ঝুঁকলে সেখান থেকেই চীন সুবিধা আদায় করতে পারত। কিন্তু লিথুনিয়ার সিদ্ধান্ত চীনের এমন পরিকল্পনায় অনেকটাই জল ঢেলে দেওয়ার মতো।
মাত্র ৩০ লাখ মানুষের ছোট্ট একটি দেশ সম্প্রতি চীন-ইইউ ‘ইটের বদলে পাটকেলে’র খেলায় নিজের আকারের চেয়েও বড় ভূমিকা পালন করেছে। গত মার্চে ইইউয়ের নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন ইউরোপীয়ান ১০ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এর মধ্যে একজন ছিলেন লিথুনিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য।
তবে চীনের এই নিষেধাজ্ঞাও শুধু মেইনল্যান্ডের জন্য বাস্তবায়িত হয়েছে, হংকং বা ম্যাকাওয়ের মতো অঞ্চলে তা কার্যকর হয়নি। ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট এখন কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট অন ইনভেস্টমেন্ট (সিএআই) নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়ছে, তা নিশ্চিতভাবেই লিথুনিয়ার ওই পার্লামেন্ট সদস্যসহ ১০ ইইউ কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে পরিবর্তন হবে না।
লিথুনিয়াও গত মার্চে বলেছে, তাইওয়ানে তারা একটি বাণিজ্যিক অফিস খুলতে যাচ্ছে। সেই তাইওয়ানকে আবার নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে চীন। কোনো দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন মনে করলে তা সহ্য করে না বেইজিং। ফলে তাইওয়ানে লিথুনিয়ার বাণিজ্যিক অফিস খোলার ঘোষণা চীনের জন্য সুখকর নয়। শুধু তাই নয়, গত ২০ মে লিথুনিয়ার পার্লামেন্টে এক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যাতে বলা হয়— উইঘুরদের প্রতি চীন যা করছে, তা গণহত্যার সামিল।
চীনও কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। রাষ্ট্রয়াত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘চীনকে কোনো ধরনের আক্রমণের যোগ্যতাই নেই লিথুনিয়ার।’ কোনো ছোট দেশের পক্ষে এমন আচরণ মানায় না— এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্যও দেওয়া হয় ওই সম্পাদকীয়তে।
এতে বলা হয়, ‘লিথুনিয়া এই কৌশল (১৭+১) থেকে সরে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দেশটিকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি— তারা যেন চীনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখে।’
লিথুনিয়া যে অঙ্ক কষে চীনের কাছ থেকে সরে এসেছে, তা হলো— তারা ২৭ রাষ্ট্রের শক্তিশালী ইইউয়ের হয়ে চীনের পরিকল্পনাকে ভেস্তে যাওয়ার পথ করে দিলে চীনের সঙ্গে থাকার চেয়েও বেশি সুবিধা পাবে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিবিধির দিকেও লিথুনিয়ার নজর আছে। এ ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়া সম্প্রতি আরও কাছাকাছি আসছে। এই ব্যাপারটি তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়ার জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ এসব রাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে ছিল। ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেওয়ার পর তারা এখন রাশিয়াকে চরমভাবে অবিশ্বাস করা শুরু করেছে। মস্কো কবে না জানি তাদের দিকেও নজর দেয়— এমন আশঙ্কা তারা উড়িয়ে দিতে পারে না।
সাইবারস্পেসে চীনের সামর্থ্য হিসাবে রেখে এটাও তাদের ভয়ের কারণ— দেশটির সব কৌশল কি রাশিয়ার কাছে ফাঁস করে দেবে বেইজিং? কেউ কেউ বলে থাকেন, লিথুনিয়া বিপদ আঁচ করতে পেরেই চীনের বলয় থেকে তড়িঘড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে। লিথুনিয়ার এই সিদ্ধান্ত এস্তোনিয়া, লাটভিয়াসহ আরও কিছু ১৭+ ১ সদস্যদের প্রভাবিত করবে।
আরও পড়ুন-
- যুক্তরাষ্ট্র নয় বদলে যাওয়া পাকিস্তানের চাহিদা মেটাচ্ছে চীন
- চীনের ব্যাপারে কোয়াডকে সতর্ক করলেন মাহাথির মোহাম্মদ
এছাড়া সম্প্রতি জার্মানিতে যা হয়েছে, সেটিও ইইউয়ের সঙ্গে চীনের বিনিয়োগ চুক্তির ভবিষ্যতকে আরও প্রভাবিত করবে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল মূলত ইইউয়ের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি গত বছর ইইউয়ের সঙ্গে চীনের প্রাথমিক বিনিয়োগ চুক্তিটি করতে সবচেয়ে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ছিল। সেই অ্যাঙ্গেলা মের্কেল তার দেশের আগামী ফেডারেল পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর সরে দাঁড়াবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্র জার্মানির গ্রিন পার্টি ক্ষমতায় এলে বা ক্ষমতাসীন জোটে যোগ দিলে এই সিএআই চুক্তিটি আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে। কারণ গ্রিন পার্টি আগেই এই চুক্তির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
এমন যখন অবস্থা, ঠিক তখন আবার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিরোধের মুখোমুখি হয়েছে চীন। গত ৬ মে চীন-অস্ট্রেলিয়া কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপের অধীনে সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গত এপ্রিলে দেশটির ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে বেইজিংয়ের দু’টি রোড অ্যান্ড বেল্ট চুক্তি বাতিল হয়েছিল। এর পেছনে ক্যানবেরা কারণ দেখিয়েছিল জাতীয় সুরক্ষাকে।
সব মিলিয়ে চীন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনাকাঙ্ক্ষিত এক পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। আর চীনকে এমন পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে মূলত আমেরিকায় বাইডেনে প্রশাসনের নেওয়া নতুন নীতি। বাইডেন প্রশাসন আমেরিকার মিত্রদের সঙ্গে জোট পুনর্গঠনে জোর দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এর ঠিক বিপরীত কাজটিই করে আসছিল।
যেমন— যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কগুলো ফের চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত মিলে কোয়াড জোট নতুন করে এসেছে আলোচনায়। বাইডেন প্রশাসন মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই মিত্রদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ফের সুসংহত করার পথে এগিয়ে গিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নেতাদের মধ্যে কোনো আলোচনার সম্ভাবনাও শিগগিরই দেখা যাচ্ছে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতা ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এখন বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন বেইজিং অলিম্পিক যেন কূটনৈতিক অঙ্গনে বর্জন করা হয়।
এদিকে আগামী ১৬ জুন জেনেভায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দেশই গত মঙ্গলবার এ বৈঠকের খবর ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে। এ পরিস্থিতে বিশ্ব রাজনীতিতে এমন একটি বিভাজন অবস্থার জন্ম হচ্ছে, যা আমরা আগে কখনো দেখিনি।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য জি-সেভেন সদস্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য মিত্ররা এখন চীনকে ঘিরে ধরে তাকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। সবার নজর এখন চীনের দিকে থাকলেও কেউই দেশটির সঙ্গে অর্থবহ সংলাপের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না।
এখন চীনের একমাত্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে নেকড়ে যোদ্ধা কূটনীতি (উলফ ওরিয়র ডিপ্লোম্যাসি)। এটি এখন আরও দ্বিগুণ গতি পেতে পারে।
স্পষ্টতই ২০২২ সালে পার্টির পঞ্চবার্ষিকী সম্মেলনের পরেও চীনের শীর্ষ নেতার অবস্থানে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে শি জিনপিংয়ের। তাই সহসাই তিনি তার কূটনীতির কোনো ব্যর্থতা স্বীকার করতে যাচ্ছেন না। তাই দিগন্তে বড় কোনো পরিবর্তনের রেখাও দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যদি এটিই হয়ে থাকে, তাহলে বর্তমান অচলাবস্থা চীনের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতির ‘নিউ নরমাল’ হয়ে উঠতে পারে।
লেখক: নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ের সম্পাদকীয় লেখক কাতসুজি নাকাজাওয়া। আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাংবাদিকতার জন্য ২০১৪ সালে ভন–উয়েদা পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। তার বিশ্লেষণটি সারাবাংলার পাঠকদের জন্য ভাষান্তরিত করে প্রকাশ করা হলো। ভাষান্তর করেছেন সারাবাংলার নিউজরুম এডিটর আতিকুল ইসলাম ইমন
সারাবাংলা/আইই/টিআর
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চীন-ইইউ চীন-যুক্তরাষ্ট্র চীন-রাশিয়া চীনে কূটনীতি চীনের পররাষ্ট্রনীতি শি জিনপিং