সরকারের ভালো কাজ আমার ভালো লাগে না!
৩১ মে ২০২১ ২১:২৬
রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে, মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে, এক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনার সুযোগই নাই। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ- এটা পুরানো খবর। বন্ধুপ্রতিম দেশ শ্রীলঙ্কাকে বিশ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ সহায়তা বা নির্যাতিত নিপীড়িত ফিলিস্তিনের আর্থিক সহায়তা করা, সব ষড়যন্ত্র চক্রান্ত উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যার দেশপ্রেম ও দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণসহ চলমান চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়ন চোখ ও বুদ্ধি বিবেক সচল থাকলে কারও অস্বীকার করার উপায় নাই। করোনার এই মহামারির সময়েও রিজার্ভের এই রেকর্ড আমাদের অনেকেরই ভালো লাগে না, গা জ্বালা করে। অর্থনীতির কঠিন তত্ত্ব হাজির করে ইনিয়ে-বিনিয়ে কেউ কেউ এর অসরতা প্রমাণ করতে চায়। ভাবটা এমন যেন এমনি এমনি রিজার্ভ বেড়ে যায়! দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যদি কোনো কারণে খারাপ অবস্থায় থাকতো তাহলে এদের চেহারা যে কি হতো আল্লাহই ভালো জানেন। এদের সমালোচনার যন্ত্রণায় টেকাই মুশকিল হয়ে যেত।
শুধু রিজার্ভ নিয়েই বললে, দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশবাসীকে সুখবরের এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর। বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তথ্যমতে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে রফতানি আয় বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে রফতানি আয় বেড়েছে। এ কারণে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের নিম্নগতি থাকলেও প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে। দেশে উন্নয়নশীল অংশীদারদের বিনিয়োগও আসা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। করোনার মধ্যেও তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত থাকায়ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় বেড়েছে।
আমাদের কাছে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এ সংকটে থাকায় তাদের পাশে ঋণ সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই নিজ দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করে প্রথমবারের মতো অন্যকে ঋণ সহায়তা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা বাংলাদেশ বিরোধী ছাড়া কেউই অস্বীকার করবে না। রাজনৈতিক হীনমন্যতায় অনেকেই এই চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে অস্বীকার করতে চায়। কিন্তু বাস্তবতাকে কি ইচ্ছে করলেই অস্বীকার করা যায়? তবে কিছু দলের নেতা ও কিছু বিভ্রান্ত বুদ্ধিজীবীর এসব কিছুই ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে শুধু সমালোচনা করা। সেই সমালোচনাও কোনো গঠনমূলক সমালোচনা না, বিদ্বেষপূর্ণ সমালোচনা।
মাথাপিছু আয়ে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ। উঠতে-বসতে যারা ভারত বিরোধিতা করেন বা বর্তমান সরকার ও ভারতকে জড়িয়ে যারা দিনরাত চোখের পানি, নাকের পানিতে একাকার করেন, তারা বাংলাদেশের এই ভারতকে পেছনে ফেলায় খুশি হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের উন্নতিতে ভালো লাগছে না। এক্ষেত্রেও তাদের বক্তব্য ভারত শেষ হয়ে যাচ্ছে! তবুও এরা বাংলাদেশের এই অর্জনকে স্বীকার করবে না। তাদের পেয়ারে পাকিস্তানকে যে অনেক আগেই অনেক কিছুতে বাংলাদেশ পিছনে ফেলেছে এই অন্তর্জ্বালাই তাদের জীবন শেষ! এ ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলতে হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না।
ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের জন্য অর্থ সহায়তা করা, কোনো দেশকে ঋণ দিয়ে সহায়তা করা, সময় মতো প্রচুর অগ্রিম অর্থ দিয়ে রেখে মহামারি করোনার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা, নানাধরণের সময়োপযোগী বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের আপ্রাণ চেষ্টা করা অনেকেরই ভালো লাগে না। বাংলাদেশ খেলাধুলায় উন্নতি করুক; জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাক; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নানা ধরণের পদক্ষেপের কারণে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ প্রশংসিত হোক তা তাদের ভালো লাগে না। দেশে যে সমালোচনা করার মতো কিছু একেবারেই হচ্ছে না, তা কেউ বলছে না। যখনই যেখানেই খারাপ কিছু হচ্ছে সরকারের নজরে আসলে তার দ্রুত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা এসব জ্ঞানপাপীদের মনের মতো হচ্ছে না!
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যবিত্ত দেশের পথে। মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, রিজার্ভের পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি ও জিডিপিতে বাংলাদেশ আজ অনেক দেশকেই অতিক্রম করে চলেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, তথ্যপ্রযুক্তিতে স্বপ্নের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া, এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রাথমিকের চার কোটি বই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা, সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ও স্বামী পরিত্যাক্তদের ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বহু পরিমাণ বৃদ্ধি করা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াসহ নানা ধরণের সামাজিক সুরক্ষামুলক কাজ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শেখ হাসিনাও মানবিক নেতা হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রশংসিত।
পদ্মা সেতু নির্মাণ, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, ফোর লেনে জাতীয় মহাসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা- তা এখন আর অনেকেরই ভালো লাগে না। ব্যক্তি শেখ হাসিনার বিশ্ব নেতা হয়ে যাওয়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন নামি দামি সংস্থার সম্মাননা ও পদক প্রাপ্তির কথা না হয় এই অল্পপরিসরে নাই উল্লেখ করলাম। অবশ্য বাংলাদেশের সব উন্নয়ন অগ্রগতি যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই হচ্ছে- এ কথা ভাবতেই তাদের ভালো লাগে না।
তাদের ভালো লাগে সামরিক শাসকের যাঁতাকলে পিষ্ট এক উগ্র ধর্মান্ধ বাংলাদেশ। যে দেশে তালেবানি কায়দায় মধ্যযুগীয় শাসনে পিষ্ট করবে এদেশের মানুষকে। ধর্মের নামে উগ্রবাদী ধ্যানধারণা নিয়ে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করবে! বাঙালির চিরায়ত কৃষ্টি-কালচারালকে পায়ে মুড়িয়ে উগ্রবাদী দেশে পরিণত করার স্বপ্নে বিভোর থাকা তাদের ভালো লাগে। ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করে, উগ্রবাদ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৫ই আগস্ট, ২১শে আগস্টের মতো ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে প্রকৃতপক্ষে নেতৃত্বশূন্য করে আবার সেই পাকিস্তানি কায়দায় ফিরে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন দেখতে এখনো তাদের ভালো লাগে।
দেশ শাসনের সুযোগ পেয়ে দেশের আয় উন্নতি না করে, হওয়া ভবন-খোয়াব ভবন তৈরি করে লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থকরি উপার্জন করে ও চক্রান্তের রাজনীতি করে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দেওয়ার মাস্টার মাইন্ড হিসেবে দণ্ডিত হয়ে বিদেশে পলাতক থেকে দেশের বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্র করে যেতে এখনও এই অপশক্তিদের ভালো লাগে। শুধু ভালো লাগে না বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি।
বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রগতি ভালো লাগে না, বিধায় বিএনপি-জামাত-কিছু পচা বাম ও হেফাজত যে দেশবিরোধী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল বা বোধকরি এখনো অব্যাহত রেখেছে তারই সদর দফতর ব্রিটেনে বসে দণ্ডিত এক রাজনৈতিক ভাঁড় আরও কিছু অর্থলোলুপ দেশবিরোধী শক্তিদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশ থেকে অনেক দূরে নিরাপদে বসে নানা দেশের অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। আর এই ষড়যন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের সব অপকর্মের মূল হোতা, জাতির পিতার শাহাদৎবার্ষিকীতে নিজের ভুয়া জন্মদিন পালন করার মতো কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের অধিকারিণীকে সেই দেশে নিয়ে যেতে ব্যাকুল।
সরকারের, বিশেষ করে সরকার প্রধানের বদন্যতায় দণ্ডিত হয়েও যিনি বিশেষ বিবেচনায় ঘরে বসে আরাম আয়েশ করছেন, আবদার তার এখন বিদেশ যাওয়ার! উদ্দেশ্য ওই একই; ষড়যন্ত্র করা, যা তাদের বরাবরই ভালো লাগে, ভালো পারে। শুধু তাদের ভালো লাগে না বাংলাদেশের উন্নয়ন। সরকারের ভালো কাজ।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
সারাবাংলা/পিটিএম