পাবনা গণপূর্ত কার্যালয়ে অস্ত্র হাতে মহড়া, ব্যবস্থার দাবি টিআইবির
১৩ জুন ২০২১ ১৮:৩৫
ঢাকা: পাবনা গণপূর্ত কার্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া সরকারি ঠিকাদারি ও নির্মাণ কাজে অবৈধ পেশিশক্তি ব্যবহারের নগ্ন প্রকাশ উল্লেখ করে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (১৩ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনাকে দেশের সরকারি ক্রয় ও নির্মাণকাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত অবৈধ বলপ্রয়োগ, ভয়-ভীতির মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়া এবং অস্ত্রের মুখে প্রতিযোগিতামূলক কাজবণ্টন প্রভাবিত করার আরেকটি প্রকাশ্য উদাহরণ বলছে টিআইবি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি ক্রয়, নির্মাণকাজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক নানা কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতার জন্য প্রতিযোগিতামূলক যেই টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধ বলপ্রয়োগ, হুমকি-ধামকি এবং জবরদখলে দীর্ঘদিন ধরেই তা অকার্যকর হয়ে আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট নানা কর্তৃপক্ষ ছোটখাটো কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত বরাবরই তা অস্বীকার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। পাবনার ঘটনা সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পেশিশক্তি ব্যবহারের ভয়াবহ সেই রেওয়াজের আরেকটি দৃশ্যমান নজিরমাত্র। অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী প্রদর্শিত অস্ত্রগুলোকে নিবন্ধিত বৈধ অস্ত্র দাবি করা হলেও ড. জামান বলেন, “যদি অস্ত্রগুলো বৈধ হয়েও থাকে, তবুও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরে জনসম্মুখে এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভীতি সঞ্চার করা আইনসিদ্ধ হতে পারে না। তাই এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলাটা অত্যুক্তি হবে না। এ ধরণের সন্ত্রাসী তৎপরতার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ‘অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে’- পুলিশের এমন দায়সারা আশ্বাস আমাদের স্তম্ভিত করেছে। এই আশ্বাসেই পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ থমকে যাবে কি না সেটিও আমরা নিশ্চিত নই। অথচ ঘটনার পরপরই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- স্বাভাবিকভাবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। তাই আইনি প্রশ্নগুলোর সমাধানের পাশাপাশি এধরণের ঘটনা বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তড়িৎ ও কার্যকর তৎপরতার দাবি জানাই। সরকারি দলসংশ্লিষ্ট হিসেবে এই অস্ত্র মহড়ার কুশীলবরা ছাড় পেয়ে গেলে এধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিষাক্ত সাপের মত সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়বে।”
ড. জামান বলেন, ‘সরকারি টেন্ডার ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্যে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট ২০১১ সালে ই-জিপি পোর্টাল চালু করে। ফলে ক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর হলেও কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ, সিন্ডিকেট এখনও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে এবং ভয়-ভীতি, যোগসাজশ কিংবা অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার চর্চা বিদ্যমান আছে- যার প্রমাণ পাবনার এই অস্ত্র মহড়া ও পেশিশক্তি প্রদর্শন। অবিলম্বে এই ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি প্রতিশ্রুতি শুধু মৌখিক চটক হিসেবেই প্রমাণিত হবে এবং ইতিবাচক সমস্ত উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম