অপরিকল্পিত লকডাউনে জনজীবন বিপন্ন: ফখরুল
২৬ জুলাই ২০২১ ১৭:২৫ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২১ ১৯:৩৯
ঢাকা: সরকারের ‘অপরিকল্পিত লকডাউনে’ জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। বিএনপির প্রয়াত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘স্মৃতিতে অম্লান’ শীর্ষক স্মরণ সভাটি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারির এই সময় সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। তাদের উদাসীনতা, তাদের অযোগ্যতা, তাদের ব্যর্থতা, তাদের দুর্নীতি দেশকে এবং দেশের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে ফেলেছে।’
‘এই যে অপরিকল্পিত লকডাউন, হাসপাতালগুলোতে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, আইসিইউ নেই এবং ওষুধ নেই— এই একটা অবস্থা তারা (সরকার) তৈরি করেছে। এর ভয়াবহতায় জনগণের জীবন আজকে বিপন্ন। করোনা হবে, চিকিৎসা পাবে না। ভুল চিকিৎসা হবে। গরিব মানুষ চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে— এটা মেনে নেওয়া যায় না,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম— প্রান্তিক মানুষকে যেন লকডাউনের সময়টাতে এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়। তারা আমাদের কোনো কথাই শোনেনি। তারা ওই যে ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে, তার শতকরা ৮৬ শতাংশ ভুয়া। অর্থাৎ তারা যে নামগুলো দিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এটা সব ক্ষেত্রেই হচ্ছে।’
সিলেট উপনির্বাচনে গ্রেফতার-হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন ভয়ংকর করোনা মহামারি চলছে। এর মধ্যেও তারা (নির্বাচন কমিশন) সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন করছে। এত বলার পরও, হাইকোর্টে রিট করার পরও তারা বিরত থাকছে না। জোর করে এই নির্বাচন করে বিরাট একটি অংশকে তারা বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এই নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি না। অথচ আমাদের নেতাকর্মীদের অস্থির করে রেখেছে, বাড়ি বাড়ি রেইড করছে, নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। তাদের গ্রেফতার করছে।’
বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া চলছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, একদলীয় একটা শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৭৫ সালের মতো অবস্থা তৈরি করেছে। এটি একদিনে হয়নি। ধীরে ধীরে সুচতুরভাবে এই অবস্থাটা তারা তৈরি করেছে। ১/১১-এর মূল্য লক্ষ্য ছিল বিরাজনীতিকরণ। সেটাই হচ্ছে এখন।’
তিনি বলেন, ‘তথাকথিত পার্লামেন্টে চিৎকার করে তারা (আওয়ামী লীগ) বলে যে আমলারা এখন সব কিছু দখল করে নিয়েছে। আমলারা দখল করে নিয়েছে এজন্য যে আমলাদের দখল করতে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি নেই, রাজনীতিবিদরা দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই সরকার কার ওপরে টিকে আছে? জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আমলা ও কিছু দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি— তাদের যোগসাজশে তারা ক্ষমতায় টিকে আছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশে দুঃসময় চলছে। এর মধ্যেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা বিএনপিকে ধরে রেখেছি, ধরে রাখার চেষ্টা করেছি, ধরে রাখতে পেরেছি। বিএনপিকে অনেকবার ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, অনেকবার বিএনপিকে ধবংস করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বিএনপিকে কখনোই ভেঙে ফেলতে পারেনি। কারণ একটাই— আমাদের শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে দর্শন দিয়েছেন, সেটি জনগণের অন্তরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে একটাই কথা— এই সরকারকে যদি না সরানো যায় তাহলে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে মূল লক্ষ্য ছিল সেই লক্ষ্য পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন সারাদেশের মানুষের দায়িত্ব, এই সরকারকে সরাতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’
আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক হুইপ মনিরুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও প্রয়াত আবদুল আউয়াল খানের ছেলে আসাদুজ্জামান খানসহ অন্যরা।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/এজেড/টিআর