Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জাতির পিতা হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী জিয়া-মোশতাক’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ আগস্ট ২০২১ ২০:৪০

ঢাকা: ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক এবং প্রধান সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান। সদ্য স্বাধীন ও নবীন রাষ্ট্র বাংলাদেশকে অকার্যকর ও ভণ্ডুল করার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।’

‘সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারী ও সুবিধাভোগী কারা?’– শীর্ষক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন আলোচকরা। রোববার (২৯ আগস্ট) রাতে এই ওয়েবনিয়ারের আয়োজন করা হয়।

আলোচকরা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বিদেশি কিছু শক্তির সাথে যোগসাজসে জিয়ার অনুগত সামরিক বাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য এবং অন্য পেশার কয়েকজন এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের দিন থেকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগুলো দেখলে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারী ও সুবিধাভোগী কারা?’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বিশ্লেষণধর্মী আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য সচিব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। প্রধান আলোচক ছিলেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আলোচক ছিলেন- আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী সিকদার (অব.), সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য শবনম আজিম।

স্বাগত বক্তব্যে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের প্রচলিত আইনে খুনিদের বিচার হয়েছে। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেককেই বিচারের আওতায় আনা যায়নি। তবে আজ ইতিহাসের দাবি অনুযায়ী সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারী কারা, মূল বেনিফিশিয়ারি কারা- এই বিষয়গুলো উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এই ব্যক্তিগুলো কারা।’

প্রধান আলোচক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৭ মার্চের আগে, মেজর জিয়া বলে কাউকে বাংলাদেশের কেউ চিনতো না। জিয়াউর রহমান যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিল না, তার প্রমাণ হলো, তার দল দ্বারা ক্রমাগত ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানানো। খুনি জিয়াউর রহমান, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ বন্ধ করেছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে এ বিচারকাজ শুরু করেন।’

এসময় মন্ত্রী এই হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম প্রতিটি পদে পদে কিভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল, সেই বর্ণনা দেন।

বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “খুনি জিয়াউর রহমান পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের ‘প্রবলেম অব ডেভেলপমেন্ট’ বইটি আমি পড়ি, সেই বইয়ে তিনি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে মেজর জিয়ার সরাসরি যোগসূত্র ছিল। কয়েক মাস আগে, খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে, তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছিল, যেখানে সে একাধিকবার বলেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল চাবিকাঠি নেড়েছিল জিয়াউর রহমান। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনে, যে ডিক্লারেশন দেওয়া হয়, সাক্ষ্য আইনের ভাষায় তাকে ডায়িং ডিক্লারেশন বলে। সাক্ষ্য আইনে এর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। খুনি জিয়া এই হত্যাকাণ্ডে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।”

ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলার মাটিতে ফিরে এলেন, আমার মনে হয় তখন থেকেই তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছে, এরা বাংলাদেশের গৌরবগাঁথা, গৌরব ইতিহাস মেনে নিতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আমরা জয়লাভ করেছি, বিজয় অর্জন করেছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই প্রভুরা এটা মেনে নিতে পারেনি।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড একদিন, দুইদিন, ছয়মাস, নয় মাসের পরিকল্পনা ছিল না, এটা ছিল দীর্ঘ পরিকল্পনা, এর রয়েছে দীর্ঘ প্রেক্ষাপট।’

সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত বলেন, ‘১৯৭৫ এর পর দেশে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি ছিল। ক্ষমতার প্রতি জিয়াউর রহমানের প্রচণ্ড লোভ ছিল। রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমকে, জিয়াউর রহমান দেশে ফিরিয়ে এনেছিল আর বেগম খালেদা জিয়া, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণ আদালতের রায়কে অস্বীকার করে, বিচার বিভাগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিল।’

ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরিতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হওয়ার সাথে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরাজিত হয়েছিল। এই পরাজয় তারা মেনে নিতে পারেনি। তাই, সিআইএ এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসাই যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। মূলত দেশীয়, আন্তর্জাতিক এবং সুবিধাভোগীদের সমন্বিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।’

সভাপতির বক্তব্যে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘শুধু কয়েকজন বিপথগামী সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, এটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নয়। বিভিন্ন ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ থেকে আমরা সেই বড় শক্তির ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা করতে পারি।’

সারাবাংলা/এনআর/এমও

আওয়ামী লীগ ওয়েবিনার জাতির পিতা হত্যা জিয়া মোশতাক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর