নভেম্বরের শেষে পদ্মাসেতুর পিচ ঢালাই শুরু
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৪০
ঢাকা: স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান। সেতুর সড়কপথের কাজও শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে সড়কপথে পিচ ঢালাইয়ের কাজ, যা আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে শুরু হবে। এরপর চলবে যানবাহন।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে একথা বলেন ।
তিনি বলেন, গত ২৩ আগস্ট স্বপ্নের পদ্মাসেতুর সড়কপথের পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে সেতুতে সড়কপথের সবকয়টি স্ল্যাব বসানো শেষ হয়। এখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলতে প্রয়োজন পিচ ঢালাই, সেটা আগামী নভেম্বরের শেষে শুরু হবে। আর পিচ ঢালাই শেষ হতে সময় লাগবে ৩-৪ মাস। এরপর অন্যান্য কাজ শেষ হতে যে সময়টা লাগবে তার পরেই যানবাহন চলাচল করতে পারবে সেতু দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সেতুতে কার্পেটিং কাজ, ট্রলিং কাজ, মুভমেন্ট জয়েন্ট লাগানো ও গ্যাস লাইন ঠিক করার কাজ চলছে। একইসঙ্গে রেল সংযোগের কাজও সমানতালে চলছে। আমাদের শিফট ভাগ করা আছে। ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে সেতুতে। ঝড়-বৃষ্টি ও রোদ কিছুতেই থেমে নেই পদ্মাসেতুর কাজ। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেতুর কাজ শেষ করে তা যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিতে চাই।
এর আগে ২৩ আগস্ট সেতুর সড়কপথের শেষ রোড স্ল্যাবটি সকাল ১০টা ১২ মিনিটের দিকে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়। এর মধ্য দিয়ে সড়কপথের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুতে ৪টি ভাগে ভাগ করে রোড স্ল্যাব বসানোর কাজ করা হয়। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ থেকে সেতুতে রোড স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয়। সেতুতে ২ হাজার ৯১৭টি স্ল্যাব বসানো হয়। এই সেতুর সড়কপথ তৈরিতে প্রায় ২২ মিটার দীর্ঘ এবং ২ দশমিক ১০ মিটার চওড়া রোড স্ল্যাব ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া গত ২০ জুন শেষ হয় সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। এদিন সেতুতে বসে যায় ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব। আর গত ১৯ আগস্ট পদ্মাসেতুতে গ্যাস লাইস বসানোর কাজ শুরু হয়। এই কাজও খুব দ্রুত শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে সেতু এবং এর দুই প্রান্তে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন বসাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে সেতুতে প্রতিরক্ষা দেওয়া (রেলিং বা প্যারাপেট ওয়াল) বসানো হবে ১২ হাজার ৩৯৩টি। তবে এ কাজ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তাই কাজটি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চলেছে।
এছাড়া পদ্মাসেতুতে থাকবে দুই ধরনের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। একটি যানবাহনের চলার পথ আলোকিত করতে স্ট্রিট লাইটিং, অন্যটি কোনো উৎসব বা জাতীয় কোনো দিবসে পুরো সেতু নানা রঙে আলোকসজ্জা করার স্থায়ী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে আর্কিটেকচারাল লাইটিং বলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মাসেতুর কাঠামো। প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
শুধু তাই নয়, পদ্মাসেতুর সার্বিক অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। মূল সেতুর অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর নদী শাসনের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সারাবাংলা/এসজে/এনএস