সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে পড়া ৪ জেলার পুলিশ সুপারকে বদলি
১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৫৩
ঢাকা: সর্বজনীন দুর্গাপূজা ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে পড়া চার জেলার পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া চারজন হলেন ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার বিজয় বসাক, রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার সঞ্জয় সরকার।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাশ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকারকে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি), পুলিশ সদর দফতরের এআইজি ফেরদৌস আলী চৌধুরীকে রংপুরের পুলিশ সুপার, ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবীকে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি, পুলিশ সদর দফতরের এ আইজি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ফেনীর এসপি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার বিজয় বসাককে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপার, সিলেট মহানগরীর উপকমিশার সঞ্জয় সরকারকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের পুলিশ সুপার এবং পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানাকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার পদে বদলি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বদলি কারণ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা নাহলেও পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, হামলার আগে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার কারণে এই বদলি। তবে ঢাকা থেকে যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
সম্প্রতি, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, চাঁদপুর ও রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন, মন্দির ও মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
১৩ অক্টোবর রাত সোয়া ৮টায় হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়ায় ঢিল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে চারজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
হামলার ঘটনার পর রাত ১১টা থেকে হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন দুপুরে জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঞ্চনা গ্রামের জোট পুকুরিয়া বাজারে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, জামায়াত ও শিবিরের একদল নেতাকর্মী জড়ো হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখানে ৭০-৮০ জনকে দেখতে পান। তারা মিছিল করে জোট পুকুরিয়া এলাকায় সর্বজনীন শিবমন্দির পূজামণ্ডপে হামলার উদ্দেশে অগ্রসর হয়। পুলিশ বাধা দিলে তারা পূজামণ্ডপে ঢুকতে না পেরে গেইট ভাঙচুর করে।
ফেনীতে ১৬ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে ফেনী শহরের কালীমন্দির এলাকায় পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভে অংশ নিতে জড়ো হচ্ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এ সময় ফেনীর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে দুইপক্ষের স্লোগানের কারণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ৫টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ফেনীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের একটি মিছিল ঘটনাস্থলে এলে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ৫০ জন আহত হন।
কুমিল্লার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটে জকিগঞ্জে ১৪ অক্টোবর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এদিকে ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে মাঝিপল্লীতে অন্তত ২০ হিন্দু পরিবারের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
সারাবাংলা/ইউজে/এএম