সরকার পরিবর্তন এখন জনগণের দাবি: মির্জা ফখরুল
২৬ অক্টোবর ২০২১ ১৭:০৭
ঢাকা: সরকার পরিবর্তন এখন জনগণের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, এই দেশে সরকার পরিবর্তন এখন জনগণের দাবি। আওয়ামী লীগের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নাই। তারা কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারেনি। তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করে, মানুষের অধিকার ব্যাহত করে জনমানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তাই বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নতুন নির্বাচন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন। যে নির্বাচনে সকলে ভোট দিতে পারে, ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি ভাইদের বলতে চাই- আপনারা অনেক কষ্ট করে, অনেক প্রতিকূলতা এড়িয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। আমি অনুরোধ করব, এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যে যেখান থেকে এসছেন চলে যাবেন। আমরা কোনো মিছিল বা র্যালি করছি না সম্প্রীতির স্বার্থে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করার জন্য সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হিন্দু, মুসলমানের মধ্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে বাস করছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের, মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরে আঘাত হেনেছে। তাদের লক্ষ্য একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ক্ষমতায় এসে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধবংস করেছে, প্রশাসনকে ধবংস করেছে, নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করেছে এবং মিডিয়াকে অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে দমন নিয়ন্ত্রণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস দেওয় না, আমাদেরকে একটা সভা করার জায়গা দেয় না, একটা মিছিল করার জায়গায় দেয় না। তারা সবরকম নির্যাতনমূলক-দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা একটু দয়া করে শান্ত থাকবেন। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর কোনো আঘাত আসলে আমরা সামনে গিয়ে সেটা অবশ্যই প্রতিহত করব, প্রতিরোধ করব। আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে একটি মুক্ত সমাজ, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যেখানে সম্প্রদায় সম্প্রদায় কোনো বিভেদ-বৈষম্য থাকবে না। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আজকে ধবংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এবং নির্বাচনে যাব না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে আগামী দিনে নির্বাচন করব।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদের আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। যেকোনো মুহূর্তে আন্দোলনের ডাক পড়বে। সময় পাবেন না। আজকে যেমনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার থেকে শতগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। রাজপথে যে বাঁধা আসবে সেই বাঁধা অতিক্রম করতে হবে। আঘাত করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ আন্দোলন, অন্য কোনো পথ নেই। সেজন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এরশাদের সময়ও মন্দিরে হামলা হয়েছে। কিন্তু এরশাদের পতন কেউ ঠেকাতে পারে নাই। আজকে মন্দিরে হামলা করে ক্ষমতা টিকানো যাবে না।এই জুলুমবাজ, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজ ও তাবেদারি সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।’
প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হায়দার আলী খান লেলিন, আমিরুজ্জামান শিমুল, নিপুণ রায় চৌধুরী, অঙ্গ সংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নয়ন, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস