সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরার পর্যায়ে চলে গেছে: ফখরুল
৬ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৩১
ঢাকা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং দফায়, দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরার পর্যায়ে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণ সভা আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করছে। তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করবে, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করবে- সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই যে এত কথা তারা বলে, ডেভেলপমেন্ট, উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট- সবকিছুর মূলে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশকে ঋণগ্রস্থ করে ফেলা, বাংলাদেশকে হাঁটুভাঙা একটা জাতিতে পরিণত করা।’
‘আজকে যখন আমি আসছি উত্তরা থেকে, দেখি বাস চলছে না, ট্রাকও চলছে না, মানুষ পায়ে হাঁটছে। মোটরসাইকেল বেশি চলছে। কারণটা কী, আপনারা সবাই জানেন যে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম হঠাৎ করেই লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। মানুষ যাবে কোথায়? একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে এখন বাড়িয়ে দিল জ্বালানির দাম। এখন তো নিত্যপণ্যের দাম আরও কয়েকগুণ বাড়বে। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সাধারণ মানুষের তো এখন না খেয়ে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থায় চলে গেছে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আজ দেশের মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে, কথা বলতে শুরু করেছে, নিজেদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে শুরু করেছে, ভোটের কথা বলছে, অধিকারের কথা বলছে, ভাতের অধিকারের কথা বলছে, স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা বলছে, সুতরাং সেই খান থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হবে। সেই কাজ তারা শুরু করেছে বিভিন্ন রকম ইস্যু তৈরি করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখুন ইউপি নির্বাচনে সাত মাসে ৮৪ জন মৃত্যুবরণ করেছে এবং সব তাদের লোক। তারা নিজেরা নিজেরা এখন মারামারি করে মরছে। কারণ, বিরোধিদল তো নাই। আজকে তারা লুট করে, মারামারি করে এবং মামলা দেয় বিএনপির বিরুদ্ধে। দুর্গাপূজার সময় কী করেছে। তারা নিজেরাই মণ্ডপ ভেঙে বিএনপি নেতাদের নাম উল্লেখ করে শত শত অজানা লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এখন যাকেই ধরে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়। এটা তাদের পুরোনো স্টাইল।’
আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একমাত্র পথ হচ্ছে এদের সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, রাজপথে নেমে আসি এবং আমাদের শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার তৈরি করি।’
প্রসঙ্গ তরিকুল ইসলাম
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, এই পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত অঞ্চলে যেসব রাজনৈতিক নেতা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, দারিদ্র্য দূর করে, অশিক্ষা দূর করে একটা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলবার জন্যে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, সেই জাতের একজন মহান নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম।’
তিনি বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম সারাজীবন এই লক্ষ্যেই কাজ করেছেন যে, কী করে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়। সেই কারণে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে, মুক্তিযুদ্ধের আগে মওলানা ভাসানীর আদর্শ ধারণ করে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করি, তরিকুল ইসলাম তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা। তার সঙ্গে আমাদের আদর্শগত যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল সেই আদর্শ নিয়েই আমরা রাজনীতি শুরু করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম একেবারেই সাধারণ মানুষের মতো, খেটে খাওয়া মানুষের মতো জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি জেলে গেছেন, সেখানেও সাধারণভাবে থেকেছেন, তিনি যখন ছাত্র রাজনীতি করেছেন, তখনও সাদামাঠা জীবন-যাপন করেছেন, তিনি যখন কৃষকের জন্য রাজনীতি করেছেন, তখনও একেবারে সাদা-মাঠা জীবন-যাপন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘যুগের পরিবর্তন হয়েছে, অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। সেই সমাজতান্ত্রিক দেশও এখন নেই, সেই বিপ্লবও নেই। সেই সংগ্রামও নেই। এখন ডানপন্থি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। তরিকুল ইসলাম তার সমগ্র জীবন দিয়ে এই কাজটি করে গেছেন। পাকিস্তানের নির্যাতন, আওয়ামী লীগের নির্যাতন, সর্বশেষ এরশাদ সরকারের নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু অসুখের কাছে তিনি পরাজিত হননি। শেষ পর্যন্ত তিনি লড়াই করেছেন যে, কী করে বেঁচে থাকা যায়, কী করে কিছু কাজ করা যায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে সংকট চলছে, এই সংকটে তরিকুল ইসলাম আমাদের কাছে একটা বাতিঘর। তার দিকে তাকিয়ে আমরা যদি এগিয়ে যাই, নিজেদের ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাই, তাহলেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম