‘কর কমালে বরং তেলের দাম কমানো যেত’
৮ নভেম্বর ২০২১ ১৯:০৯
ঢাকা: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক হিসেবে অভিহিত করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের ওপর বিভিন্ন ধাপে যে পরিমাণ শুল্ক ও কর আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিলেই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। বরং তেলের দাম আরও কমানো যেত।
সোমবার (৮ নভেম্বর) জ্বালানি তেলের দাম কমানো এবং বাস-লঞ্চের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচির প্রক্কালে এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও তেল পাচারের অজুহাত দেখিয়ে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৪৬ দশমিক ৬৩ টাকায় তেল কিনে সরকার ৮০ টাকায় কিনতে বাধ্য করছে। সরকার তিন ধরনের শুল্ক, রিফাইন খরচ, জাহাজ খরচ ও পরিবহন বাবদ এখন থেকে প্রায় ৩৪ শতাংশ, অর্থাৎ লিটারে ১৯ টাকার বেশি তুলে নিচ্ছে। এভাবে শুল্ক-ভ্যাটসহ সরকার গত ৭ বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। মুনাফা থেকে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করলে অথবা কর কমালেই তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হতো না, বরং কমানো যেত।
আরও পড়ুন-
- লঞ্চ ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
- ৩ দিন পর ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন
- ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিচ্ছে লঞ্চ— অভিযোগ যাত্রীদের
- বেশিরভাগ গণপরিবহনে ২৬ শতাংশের বেশি ভাড়া নিচ্ছে
- ২৬ শতাংশ ভাড়া বাড়ল গণপরিবহনে, সোমবার থেকে কার্যকর
- ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন
এদিন পল্টন মোড়ে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার জন্য সচিবালয়ের প্রধান ফটকের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নূর হোসেন চত্বরে বাধা দেয়। এসময় তারা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
এর আগে প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগুতে থাকলে বাম জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। এসময় সড়কে অবস্থান নেন বামজোটের নেতাকর্মীরা।
জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল আলী, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূইয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) বিধান দাস।
বক্তরা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষি, পরিবহন, শিল্প ও বিদ্যুতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। কারণ পরিবহনের ৭২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কৃষির ৯৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, শিল্পের ৮০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, বিদ্যুতের ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬ শতাংশ ফার্নেস অয়েল ব্যবহৃত হয়।
তারা বলেন, বাড়তি দামের প্রভাবে এই খাতের ওপর নির্ভশীল প্রায় ১৬ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরই মধ্যে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ ও লঞ্চ ভাড়া ৩৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিআরটিএ বর্ধিত ভাড়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, পরিবহনগুলো বাস্তবে তার চেয়ে বেশি ভাড়া যাত্রীদের থেকে আদায় করছে। সরকার ও পরিবহন মালিকদের সাজানো নাটকের মাধ্যমেই এই ভাড়া বাড়ানো হলো। মালিকদের হাতে বাড়তি মুনাফা তুলে দেওয়া হলো।
বাম জোটের নেতারা আরও বলেন, তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার ও ভাড়া বাড়িয়ে পরিবহন মালিকরা মুনাফা লুটবে। আর আপামর জনগণের শুধু পকেট কাটা যাবে। দেশের শাসনব্যবস্থার এই জনবিরোধী অযৌক্তিক নীতির বিরুদ্ধে এবং বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক শক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।
ব্কতরা আরও বলেন, চাল-ডাল-তেল-পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই জনজীবনে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে। তার ওপর জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি জনগণের কাছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’-এর সামিল।
অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল, এলপিজি ও অটোগ্যাসের বর্ধিত মূল্য এবং পরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। তা না করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সররকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর