বেসরকারি গণপরিবহনে ‘হাফ পাস’ চালুর বিষয়ে বৈঠক কাল
২৬ নভেম্বর ২০২১ ১৬:১০
ঢাকা: শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনগুলোতে ‘হাফ পাস’ চালুর বিষয়ে আগামীকাল শনিবার (২৭ নভেম্বর) বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকালে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান।
ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) পরিচালিত বাসে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ বা অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের এই দাবি মেনে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনটি শর্তে ১ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা এই ‘হাফ পাস’ সুবিধা পাবে।
এদিকে, বেসরকারি মালিকানাধীন পরিবহন কোম্পানি পরিচালিত বাস-মিনিবাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ পাস’ চালুর বিষয়টি আলোচনার জন্য আগামীকাল শনিবার (২৭ নভেম্বর) সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা হবে।
এ তথ্য জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আশা করি— সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা ও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংবেদনশীল থেকে বেসরকারি পরিবহনের মালিকরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন-
- বাসে অসদাচরণ, বদরুন্নেসার সামনে প্রতিবাদ
- ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির পরবর্তী ‘শিকার’ কে!
- ডিএসসিসির বেশির ভাগ গাড়িচালকই অদক্ষ ক্লিনার
- ডিএসসিসি’র গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম শিক্ষার্থী নিহত
- ফের সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের— নিরাপদ সড়ক চাই
- গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ নিশ্চিত করতে হবে
- ‘হাফ পাস’ নিশ্চিত হলো জবি শিক্ষার্থীদের, সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা
- ২০১৮ থেকে ২০২১— ছোটরা মনে করাচ্ছে বড়দের প্রতিশ্রুতি [ছবি]
- ‘হাফ পাস’ আন্দোলনে হামলা, সোমবার শাহবাগ অবরোধ শিক্ষার্থীদের
মন্ত্রী জানান, বিআরটিসির বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে হলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা ছবিযুক্ত বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। ‘হাফ পাস’ সুবিধার জন্য বাকি দুই শর্ত জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে এ কনসেশন (অর্ধেক ভাড়া) পাবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনে এ কনসেশন প্রযোজ্য হবে না। শিগগিরই বিআরটিসি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
রাজধানীর গণপরিহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ বা অর্ধেক ভাড়ায় চলাচলের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। তবে এ মাসের শুরুর দিকে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন পরিবহন মালিকরা তিন দিনের অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট পালন করলে বিআরটিএ বৈঠকের মাধ্যমে গণপরিহনের ভাড়া ২৬ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়। ওই সময় থেকেই পর পর বেশ কয়েকদিন ‘হাফ পাস’ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দ্বন্দ্ব ও এর জের ধরে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
সবশেষ গত শনিবার (২০ নভেম্বর) বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী শনির আখড়া থেকে কলেজে আসার পথে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে বাসের হেলপার তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এক পর্যায়ে ঠিকানা পরিবহনের ওই বাসের হেলপার তাকে ধর্ষণের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। রোববার (২১ নভেম্বর) বকশী বাজার এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরাও।
পরে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। এক পর্যায়ে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যেই গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় হত্যার শিকার হয় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী। এরপর শিক্ষার্থী ‘হাফ পাসে’র পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের দাবিতেও আন্দোলন শুরু করে। বৃহস্পতিবারও গুলিস্তান, শান্তিনগর, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, আসাদ গেট, উত্তরা, রামপুরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখে ওই সব এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছে, ২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া দুই বাসের প্রতিযোগিতার মুখে প্রাণ হারিয়েছিল শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীব। এরপর দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। টানা কয়েকদিন সড়ক অবরোধের পর তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে তারা আন্দোলন স্থগিত করে। এবারে আন্দোলনে নেমে শিক্ষার্থীরা বলছে, বড়রা আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখে রাজপথ ছেড়েছিলাম। বড়রা বলুন, আপনারা কি আপনাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রেখেছেন?
সারাবাংলা/এনআর/এএম